
জয়নাল আবেদীন,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ১১ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান এলাকার ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তিন ধাপে সরকার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলেও সীমান্তবর্তী এ স্কুলগুলো আজও জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাই এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের অর্থে শিক্ষা উপকরণ ক্রয়সহ যাতায়ত ব্যয় নির্বাহ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জাতীয়করণ ভুক্ত না হলে যে কোন সময় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে চা শ্রমিক পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের বাঘাছড়া, চাম্পারায়, কুরমা, কুরঞ্জী, মাধবপুর ইউনিয়নের মদনমোহনপুর, মাধবপুর, পদ্মছড়া, পাত্রখোলা, শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর, কানিহাটি, ডবলছড়া ও দেওছড়া চা বাগানে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১৯৪৮, ১৯৬৪, ১৯৮৪ সাল সহ বিভিন্ন সময়ে এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে এভাবেই বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। শুরু থেকেই এসব বিদ্যালয়ে চা বাগান কর্র্তপক্ষ একজন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সাপ্তাহিক বেতনের ভিত্তিতে পাঁচটি ক্লাসে পাঠদান করানো হতো।
অবহেলিত শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালে সরকারী বিধি মোতাবেক প্রতিটি বিদ্যালয়ে চারজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করলেও চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষকদের সমহারে মাসিক ১২শ’ টাকা বেতন প্রদান করছেন। এ টাকা দিয়েই শিক্ষা উপকরণ ক্রয় ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাতায়াত ব্যয় করতে হয়। নিপেন সাহা, রওশন আলী, প্রদীপ পাল সহ শিক্ষকরা বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড়ে দেড় শতাধিক করে শিক্ষার্থী আছে।
তারা আরও বলেন, ১ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে সরকারী নীতিমালা মেনে আন্তরিকভাবে শিশুদের পাঠদান করালেও আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো ও আমাদেরকে জাতীয় করণ করা হয়নি। স্বল্প হারে সম্মানি গ্রহন করে আমাদের পক্ষে সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিগত ৫ বছর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে তারা জানান। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ করেও বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণভুক্ত করতে পারছেন না।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, জাতীয়করণ ভুক্ত হওয়ার মত সকল প্রকার অবস্থা বিরাজমান থাকলেও তাদের বিদ্যালয়গুলো এখন জাতীয়করণ ভুক্ত হচ্ছে না। অথচ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একেবারে নতুন বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, এ উপজেলায় ১২টি চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ বঞ্চিত ও শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকার যেখানে ঝড়ে পড়া রোধে অনেক চেষ্টা করছে সেখানে কিভাবে এই ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলো তা ভাবতে পারছেন না। বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এ উপজেলায় নতুন এসেছি। এসব বিদ্যালয় সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে তার আগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে তিনি জানান।
ইতিপূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে রাজনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ১২টির মধ্যে পাত্রখোলা, চাম্পারায় ও পদ্মছড়া চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ভুক্ত হওয়ার সর্বশেষ তালিকায় নাম শিক্ষা অধিদপ্তরে গেছে। বাকিগুলো হয়তো পর্যায়ক্রমে যাবে।
সংবাদেমইল২৪.কম/জেএ/এনএস
Posted ৮:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ জানুয়ারি ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.