শনিবার ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় যানবাহনের আঘাতে বছরে কয়েকশ’ প্রাণীর মৃত্যু

বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬ | প্রিন্ট  

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় যানবাহনের আঘাতে বছরে কয়েকশ’ প্রাণীর মৃত্যু

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেল ও সড়ক পথে যানবাহনের আঘাতে আর বিদ্যুৎ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন সময়ে মারা যাচ্ছে বন্যাণী। এর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বছরে কয়েকশ’ প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ফলে দেশে-বিদেশে স্বনামধন্য এ উদ্যানটি একসময় বন্যপ্রাণীহীন হয়ে পড়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ লাউয়াছড়া বনবিট অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৬ মার্চ একটি গ্রিনফ্যান থ্রোপ্যাড লেজার্ড, ২১ মার্চ একটি চশমা পরা হনুমান, ৩১ মার্চ একটি হলুদ ফোঁটা ঘর গিন্নি সাপ, ১০ মে একটি হলুদ ফণীমনসা, ২৩ জুলাই একটি কিং কোবরা ও একটি সোনালি শিয়াল, ১৭ আগস্ট একটি চশমা পরা হনুমান, ২৪ আগস্ট একটি সাপ এবং ৮ সেপ্টেম্বর একটি সাপ মারা গেছে। ওই বিভাগ গত মার্চ মাস থেকে শুধু সড়ক পথে মারা যাওয়া ৯টি প্রাণীর হিসাব সংরক্ষণ করেছে। তবে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন দুর্বলতার কারণে নিয়মিত তালিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মারা যাওয়া প্রাণী সঠিক পরিসংখ্যান নেই।


সবুজ বনে আচ্ছাদিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক পথ। প্রতিদিন সড়ক পথে কয়েকশ’ যানবাহন এবং রেলপথে ১৮ থেকে ২০টি ট্রেন আসা-যাওয়া করছে। এ উদ্যানের ভেতর দিয়েই শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। রেললাইন ও সড়কের উভয় পাশেই বিস্তৃত উদ্যানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বনের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া সময় প্রায়ই সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী গাড়ির চাকায় ও ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে কিংবা আঘাত পেয়ে মারা যাচ্ছে।

একইভাবে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনে পিষ্টও বিভিন্ন সময়ে সাপসহ অন্যান্য প্রাণীরাও মারা যাচ্ছে। তবে রাতের বেলা চলাচল করে বলে বন্যপ্রাণীরা রাতেই বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া এসব প্রাণীরা অনেকগুলোরই হিসাব নেই। তাৎক্ষণিকভাবে দিনের বেলা সড়ক পথে মারা যাওয়া প্রাণী যেগুলো চোখে পড়ে, কিংবা লোকমাধ্যমে খবর পেলে বন্যপ্রাণী বিভাগ সেগুলোরই কিছু হিসাব রাখে। আর রেলপথে মানুষের চলাচল কম বলে সেখানে কাটা পড়ে কি পরিমাণ প্রাণী মারা যাচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।


২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ পাইথন প্রকল্পের উদ্যোগে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যানবাহনের চাকায় পিষ্ট ও আঘাতে কী পরিমাণ বন্যপ্রাণী মারা যায়, তার ওপর একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, এই সময়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের হিড বাংলাদেশের কার্যালয় এলাকা থেকে জানকীছড়া মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫শ’ মৃত সাপ পাওয়া গেছে। এগুলো কোনো না কোনোভাবে যানবাহনের আঘাতে মারা গেছে। এর মধ্যে কোবরা, কিং কোবরা, অজগরসহ অনেক বিপন্ন প্রজাতির সাপ ছিল। এর বাইরে চিতা বিড়াল, পেঁচা, বানর, ব্যাঙ ইত্যাদিও মৃত পাওয়া গেছে। বৃষ্টির সময় ব্যাঙ বেশি ছোটাছুটি করে। বাংলাদেশ পাইথন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সাপ ও কচ্ছপ গবেষক এবং ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন

অ্যালায়েন্সের একটি সূত্র জানায়, পাখিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য লাউয়াছড়া দেশে-বিদেশে বিখ্যাত। প্রাণীই যদি না থাকে,তাহলে এই উদ্যানের আকর্ষণই থাকবে না। সংস্থার পক্ষ থেকে সার্ভের সময় প্রায় প্রতিদিনই মৃত সাপ পাওয়া গেছে। কোনোভাবে রাস্তা বন্ধ করলে লাউয়াছড়ার প্রকৃতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে।


যোগাযোগ করলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, মৃত বন্যপ্রাণীর হিসাব পুরোপুরি সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে।

সংবাদমেইল২৪.কম/জে এ/এনএস

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত