
অনলাইন ডেস্ক : | শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
বড়দিনের (২৫ ডিসেম্বর) উৎসবের মৌসুমে ইউরোপে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বড়দিন ও নতুন বছরের উৎসবের আগেই লকডাউন কার্যকর হতে চলেছে। ইউরোপের মধ্যে অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও রাশিয়ায় দৈনিক করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড তীব্রতা দেখা গিয়েছে। এই দেশগুলিতে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ইউরোপের মধ্যে অস্ট্রিয়াই প্রথম দেশ যেখানে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। ইউরোনিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে ইউরোপজুড়ে করোনা সংক্রমণ নতুন করে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটির আঞ্চলিক ডিরেক্টর ডা. হ্যানস ক্লুগে সতর্ক করে জানিয়েছেন, করোনা রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মার্চ নাগাদ পাঁচ লাখের বেশি মৃত্যু দেখতে হতে পারে। শনিবার (২০ নভেম্বর) এসব জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লুগে বলেছেন, ‘মাস্ক পরার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ফল পাওয়া যাবে। শীতের মৌসুম, পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকা এবং বেশি সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই করোনা রোগী বাড়ার জন্য দায়ী।’
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের শরীরে ফাইজার এবং মডার্নার তৈরি করোনা টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন ওষুধ নিয়ামক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ফাইজার বা মডার্নার করোনা টিকার প্রাথমিক ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর এই বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনও মার্কিন নাগরিক এই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
এদিকে ঠান্ডা আবহাওয়া ভাইরাসের বিস্তারকে প্রভাবিত করেছে বলে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। জার্মানের ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল নাগরিকদের টিকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মার্কেল বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন চূড়ান্ত নাটকীয়তায় চলে গিয়েছে।’ জার্মানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জেনস স্পান জানিয়েছেন যে জার্মানি হয়তো করোনা রোগীদের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বা এমনকী প্রতিবেশী দেশেও চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারে। স্পান বলেন, ‘আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমাদের করোনা রোগীদের শুধু একই অঞ্চলে নয়, জার্মানির অন্যান্য অঞ্চলে স্থানান্তর করতে হবে।’ জার্মানের বাভারিয়া, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য তাদের জনপ্রিয় বড়দিনের বাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে অস্ট্রিয়া ইতিমধ্যে লকডাউন কার্যকর করার কথা ঘোষণা করেছে এবং দেশের পুরো জনসংখ্যাকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণ টিকাকরণের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ বলেছেন, ‘মানুষকে টিকাকরণের জন্য আমরা যথেষ্টভাবে রাজি করাতে পারছি না। কিন্তু এখন এটা নিয়ে কড়া বন্দোবস্ত করতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পারস্পরিক সহযোগিতা দেখাননি। এই দুষ্ট চক্র ভাঙ্গার একমাত্র উপায় টিকাদানের হার বাড়ানো।’ দেশজুড়ে লকডাউন কার্যকর হবে আগামী সোমবার থেকে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের তালিকায় পাঁচটি দেশের একটি হল রাশিয়া। টিকা প্রয়োগের পর কয়েক মাস আক্রান্ত ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত সপ্তাহ থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁ কিংবা শপিংমলে গেলে টিকা সনদ সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রাশিয়ার মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
গ্রীস গত বৃহস্পতিবার করোনভাইরাস-সম্পর্কিত নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। যাদের এখনও টিকা দেওয়া হয়নি তাদের টিকা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত চাপ চাপ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে করোনার পদক্ষেপগুলো “যারা এখনও দ্বিধাগ্রস্ত” তাদের মন পরিবর্তন করতে এবং টিকা নিতে সাহায্য করবে।
এদিকে স্পেনে চালু করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ টিকাকেন্দ্র। প্রশাসন বলছে, পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৫২ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
পরিসংখ্যান ভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি সপ্তাহে বিশ্ব জুড়ে গড়ে অর্ধ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।
গত ১৩ নভেম্বর মহামারিতে মৃত্যু সাড়ে ৫১ কোটি ছাড়িয়ে যায়, আর এর পরের সাত দিনে মারা গেছে আরও ৫০ হাজার মানুষ।
Posted ১১:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.