
স্পোর্টস রিপোর্টার, সংবাদমেইল২৪ডটকমঃ | রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৬ | প্রিন্ট
বড় দলগুলোর বিরুদ্ধ টেস্ট ক্রিকেটে জয় ছিল না বললেই চলে। যত জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিদ্রোহের কারণে সেই দল দুটিও ছিল ভাঙ্গাচোরা। ফলে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ের অভাব ছিল এতদিন পর্যন্তও।
সেই অপেক্ষার অবসান হলো রোববার। টেস্টে অবিস্মরণীয় এক জয়ই পেল বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে পরাজিত করেছে টাইগার শিবির। জয়তু মুশফিক বাহিনী। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ২২ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে প্রবল আধিপত্য দেখিয়ে দারুণ জয়।
সব মিলিয়ে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ড্রও করল বাংলাদেশ (১-১)। এর আগে টানা চারটি টেস্টে হেরেছিল টাইগাররা। মজার বিষয় হলো মিরপুর টেস্ট তিন দিনেই শেষ। যেখানে চারটি ইনিংসও হলো, উইকেটও পড়ল মুড়িমুড়কির মতো। আবার এলে টাইগারদের ১০৮ রানের জয়ও।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এর আগে টানা নয় ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। অবশেষে দশম ম্যাচে এসে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে পরাজয়ের স্বাদ দিতে পারল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৯৫ টেস্টে বাংলাদেশের এটি অষ্টম জয়। হার ৭২টি। ড্র ১৫টি।
বাংলাদেশের দেয়া ২৭৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইংল্যান্ড অলআউট ৪৫.৩ ওভারে ১৬৪ রানে। বাংলাদেশের জয়ের নায়ক বলতে গেলে দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দুজনের ঘূর্ণি জাদুতে দিশেহারা ছিল ইংলিশ সব ব্যাটসম্যান। মিরাজ নিয়েছেন ছয়টি উইকেট। সাকিব বগল দাবা করেছেন বাকি চারটি উইকেট। কী অসাধারণ বোলিং।
দুই ইনিংস মিলিয়ে মিরাজের উইকেট ১২টি। সাকিবের পাঁচটি। এক টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২ উইকেট নেয়ার ঘটনা এই প্রথম। মিরাজ ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের সব বোলারদের।
তৃতীয় সেশনে হতাশাজনক বোলিং পারফরম্যান্সের পর চা বিরতি থেকে ফিরে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান ফেরান জো রুটকে (১)।
৬৪ বলে ৫৬ রান করে আউট হন ডাকেট। ২৪ ওভারের প্রথম বলে, দলীয় ১০০ রানে। এরপর ২৫ দশমিক ১ ওভারে রুটকে এলবিডব্লিউ করেন সাকিব।
২৫.৫ ওভারের মাথায় কুককে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড। এ যাত্রায় বেঁচে যান কুক। তখন তার ব্যক্তিগত রান ছিল ৪৪। মিরাজের করা বল রিভিউতে দেখা যায় তা অল্পের জন্য বেঁকে যায় স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে।
পরে মিরাজ হাল ছাড়েননি। পরপর জোড়া আঘাতে ইংলিশ শিবিরকে কোণঠাসা করেন তিনি। দলীয় ১২৪ রানের মাথায় ব্যালেন্সকে তামিমের ক্যাচ বানান মিরাজ। ১৪ বলে ৫ রান করে ফেরেন ব্যালেন্স। সেটা ৩১.২ ওভারে। একই ওভারের ষষ্ঠ বলে আবারো মিরাজ চমক। এবার ৪ বলে শূন্য রান করা বাংলাদেশের জামাই মঈন আলীকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১২৪ রানে ইংল্যান্ডের নেই তখন চার উইকেট।
এর আগে মিরাজের বলে রিভিউ চেয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। দলীয় ১২৭ রানের মাথায় কুকের সামনে হন্তাকারক হিসাবে আবারো উপস্থিত সেই মিরাজ। এবার কোন এলবিডব্লিউ নয়, নিখাদ কট আউট। মিরাজের বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে সিলি পয়েন্টে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দেন কুক।
১১৭ বলে ৫৯ রান করে ফেরেন ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ইংলিশ অধিনায়ক। তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি চারের মার। কুকের বিদায়ের পর দাঁড়াতে পারেননি ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টো। আবারো মিরাজের আবির্ভাব। এবার মিরাজের পঞ্চম শিকার জনি বেয়ারস্টো। ৮ বলে তিন রান করে স্লিপে শুভাগতর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ইংল্যান্ডের নেই তখন ১৩৯ রানে ৬ উইকেট।
এরপর ৪১.৪ ওভারে মিরাজের বলে আউট হয়েছিলেন বেন স্টোকস। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু সাকিব তাকে থাকতে দেননি। ৪২.৩ ওভারে সাকিবের বলে বোল্ড হন ২৬ বলে ২৫ রান করা স্টোকস। স্টোকসকে আউট করার পর স্যালুট জানিয়ে উইকেটের উদযাপন করেন সাকিব।
পরের ধাক্কাটাও সাকিবের। এবার শূন্য রানে সাকিবের বলে এলবিডব্লিউর শিকার আদিল রশীদ, ৪২.৪ ওভার। একই ওভারের শেষ বলে আনসারিকে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সবাইকে উল্লাসে মাতান সাকিব আল হাসান। ১৬১ রানে ইংল্যান্ডের নেই তখন ৯ উইকেট। জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
শেষ ধাক্কাটা দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নয় বলে শুন্য রান করা ফিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। জোড়ালো আবেদন। আম্পায়ার আঙুল তুললেন আউটের। রোমাঞ্চকর জয়ে গগন বিদারী উল্লাসে মাতেন মিরাজ-সাকিব-মুশফিকরা। ছয় উইকেট নেয়া মিরাজ স্ট্যাম্প তুলে দিলেন ভৌ দৌড়। তার পেছনে আর সবাই। জয়ের আনন্দ আসলেই মধুর।
এর আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬ দশমিক ৫ ওভার ব্যাট করে ২৯৬ রান করে গুটিয়ে যায়। সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন ইমরুল কায়েস। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৭, সাকিব আল হাসান ৪১ ও তামিম ইকবাল ৪০ রান করেন।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২০ রান করে গুটিয়ে গিয়েছিল। তার জবাবে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করতে সমর্থ হয়েছিল। অর্থাৎ প্রথম ইনিংস থেকে বাংলাদেশের ঘাড়ে ২৪ রানের বোঝা চাপে।
Posted ৫:২১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৬
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.