
সিলেট জেলা প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলিয়ে কামিল মুযাদ্দিদে যামান আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর ৯ম ঈসালে সওয়াব মাহফিল সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ফুলতলীতে সম্পন্ন হয়েছে।
(১৫ জানুয়ারী) রোববার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর মাজার, মাহফিলের পেন্ডাল, বাজার, রাস্তাঘাট সবই ছিল লোকে লোকারণ্য। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলতলী অভিমুখী জনতার স্রোত ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে ঈসালে সওয়াব মাহফিলে অংশ নেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় এতিমখানার হাজারো এতিমকে নিয়ে হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাহফিলের কার্যক্রম। এরপর অনুষ্ঠিত হয় খতমে কুরআন ও দালাইলুল খায়রাত শরীফের খতম। যোহরের পূর্বেই লোকে লোকারণ্য হয় বালাই হাওর।
বাদ জোহর খতমে খাজেগান ও দুআ শেষে লক্ষাধিক মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর সুযোগ্য উত্তরসূরী আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাতা-পিতা আমাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হবার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা মানুষ হতে পারিনি। আমাদের প্রকৃত মানুষ হবার চেষ্টা করতে হবে। মেহমানকে সম্মান ও প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। সবসময় ভালো কথা বলতে হবে। কেননা ভালো কথা হলো সদকাবিশেষ।’
তিনি আরো বলেন, খিলওয়াত তথা নির্জনবাস অত্যন্ত জরুরী বিষয়। আমাদের পীর ও মুরশিদ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) বহুবার চিল্লা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের মধ্যে অনেকে এখনও তরীকার চিল্লা করে থাকেন। যারা তরীকার শুগল-আশগাল ও যিকর-আযকারে নিবিষ্ট হন তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কেননা আল্লাহর পথে অগ্রসর হলে শয়তান ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে।’
বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী’র যৌথ পরিচালনায় মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মক্কা মুকাররামার মসজিদুল খায়র-এর সম্মানিত খতীব সায়্যিদ আল-হাবীব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আইদারুছ, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান, উজানডিহির পীর ছাহেব মাওলানা সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ছাহেবজাদায়ে ফুলতলী, ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুরের প্রখ্যাত বুযুর্গ খতীবে আ’যম আল্লামা ওজীহ উদ্দীন রামপুরী (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি ড. শাআইরুল্লাহ খান রামপুরী, রামপুর নবাবী মসজিদের ইমাম ও খতীব, মাদরাসায়ে জামিউল উলূম ফুরকানিয়ার উস্তায হযরত মাওলানা ই’তিসামুল্লাহ খান রামপুরী, মাওলানা মাকারিমুল্লাহ খান রামপুরী, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান,মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী,ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কাফীলুদ্দীন ছালেহী, মুফতী মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, সৎপুর কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালিক আহমদ, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম।
মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ সেলিম উদ্দিন, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ এর চেয়ারম্যান ডা. মো. আফজাল মিয়া, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, সৎপুর কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী, ইছামতি কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাশুক আহমদ, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, আনজুমানে আল ইসলাহ ইউএসএ’র জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, সিলসিলা ইসলামিক সোসাইটি ইউকের পরিচালক আলহাজ জসিম উদ্দিন, জমজম ট্রাভেলস’র স্বত্তাধিকারী মাহবুবুর রহমান, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রি’র প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হাসান প্রমুখ।
সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সহস্রাধিক গাড়ী বহর ফুলতলীতে আসতে থাকে, ফলে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডে তীব্র যানজট তৈরি হয়। জকিগঞ্জের জিরো পয়েন্টের দিকে একটি সেতু ভেঙে গেলে ভোগান্তি পোহান ফুলতলীগামী কয়েক হাজার মানুষ। মাহফিলের নিরাপত্তায় প্যান্ডালসহ পোরো এলাকায় শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলো। এছাড়া আনসার সদস্য,ও সেচ্ছাসেবক সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন। মাহফিলে অসুস্থ হওয়া মানুষদের সেবা দেয় সিলেটের ওয়েসিস হাসপাতাল। প্রতি বছর মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে জনসাধারণ কষ্ট পেলেও এবার গ্রামীনফোনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী টাওয়ার স্থাপন করায় সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে।
সংবাদেমইল২৪.কম/এনআই/এনএস
Posted ১০:০০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.