
সংবাদমেইল ডেস্ক | রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) প্রস্তুতে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থুর ঢিলেমি আর ব্যর্থতার জন্য ক্ষতিপূরণ মিললেও প্রকল্পটি নিয়ে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী দাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যে কারণে ঘোষিত সময় অনুযায়ী নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া)’ নামের এই প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। খবর মানবকণ্ঠের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক চলমান এই প্রকল্পটি থেকে সরে যাওয়ার কারণে এখানে কর্মরত প্রায় ১ হাজার ২২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এসব কর্মরতদের পেছনে প্রতিমাসে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয় স্তর ভেদে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। যার মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ এবং সর্বনিম্ন সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি নিয়মিত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে, এ কারণে দাতা সংস্থার সিদ্ধান্তের কথা চাউর হওয়ার পর অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আপদকালীন ওই সময়টুকু কীভাবে পার করবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।
বিশ্বব্যাংকের হঠাৎ চলে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে অবশ্য এতোটা হতাশ হচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। আইডিয়া প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক ও এনআইডির ডিজি ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাংক না থাকলেও প্রকল্প এবং জনবল টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি নিয়মিত রাখার জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সরকারের সম্মতি দরকার। কারণ মেয়াদ বাড়লেও সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না। বরং ওবার্থুর কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অর্থসহ বিভিন্নভাবে স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ৪০১ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ওই টাকায় এ কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হবে। এরপরও সরকার প্রকল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে টাকা খরচ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সম্মতি দিলে অনেক জটিলতার অবসান ঘটবে।
স্মার্টকার্ড প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্মার্টকার্ড প্রকল্পে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক থাকছে না বলে লিখিত জানিয়ে দিয়েছে। দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের পলিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আগামী ডিসেম্বরের পর জিওবির অর্থায়নে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি অর্থায়নের সঙ্গে এই প্রকল্প যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ সংশ্লিষ্টদের মাসিক বেতন-ভাতা অনিয়মিত থাকার শঙ্কা তো কিছুটা রয়েছেই।
সূত্রমতে, স্মার্টকার্ড মুদ্রণ-বিতরণের জন্য আইডিয়া প্রকল্পের সঙ্গে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের ওবার্থু টেকনোলজির প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। এর আওতায় দেশের ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা ছিল। তবে, প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাচারিতা ও কাজে গাফলতির কারণে পুরো বিতরণ কার্যক্রমটি ভেঙে পড়ে। এর আগে তাদের সহযোগিতা করার জন্য কয়েক দফা চুক্তির মেয়াদ বাড়ায় স্মার্টকার্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের এই মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি দুর্বলতা হিসেবে নেয় হয়। পরে কর্তৃপক্ষ কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জুলাইয়ে ওবার্থুর মেয়াদ হালনাগাদ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফ্রান্সের এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিদায় জানিয়ে আইডিয়া কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ শুরু করে।
দেশীয় উদ্যোগে স্মার্টকার্ড উৎপাদনে কার্যক্রম হাতে নেয়ার পর ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশি মিশনের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে অবস্থিত পারসু (স্মার্টকার্ড উৎপাদন) সেন্টার পরিদর্শনে যান। পুরো টিমই বিস্ময় প্রকাশ করে উৎপাদনের গতি দেখে। কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেশীয় উদ্যোগে এমন সাফল্যে নির্বাচন কমিশনের ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা। পাশাপাশি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও ওবার্থুর ব্যর্থতার কারণে প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার ছক ঠিক করলেও দেশীয় উদ্যোগে উৎপাদনের গতি দেখে চুক্তি নিয়মিত করতে উপায় খুঁজতে থাকে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থার ঢাকা অফিস প্রকল্পে যুক্ত থাকার আগ্রহ দেখালেও ভারতের চেন্নাইয়ে তাদের আঞ্চলিক (রিজওনাল) অফিস চুক্তি থাকাবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ হালনাগাদ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্ট ওই অফিস থেকে ঢাকা অফিসকে জানিয়ে দেয়, একটি প্রকল্পে দ্বিতীয় বার মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের নীতির বিরোধী। পরে ঢাকা অফিস নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে আগামী ডিসেম্বরের পর না থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। এর আগে এই প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বৃদ্ধি করেছিল সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মে মাসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি ডলারের চুক্তি সই করে সরকার। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ঋণ ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে পাওয়া এ ঋণ বাংলাদেশকে ৪০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর কোনো সুদ দিতে হবে না। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার কথা ছিল। পরে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে চলতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।
সংবাদমেইল/এএস
Posted ৪:০৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.