জসীম চৌধুরী,সংবাদমেইল২৪.কম | শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট
হায় হুসাইন হায় হুসাইন ধ্বনিতে আর নিজ শরীর রক্তাক্ত করে কুলাউড়ার পৃথিমপাশার শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা পালন করলো ১০ মহরম পবিত্র আশুরা।
২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালন করে আসা কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের নবাব বাড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে।
১০ মহরম বেলা সাড়ে ৩টায় পৃথিমপাশা নাবাব বাড়ির হুসেনি দালান থেকে ধর্মী ভাবগাম্ভীর্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে বের হয় সু-সজ্জিত তাজিয়া মিছিল। শিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পুরুষ যুদ্ধের নানা অনুসঙ্গ, তাজিয়া, কালো, লাল ও সবুজ নিশান উড়িয়ে মিছিলে অংশ নেয়। পা নগ্ন রেখে মিছিলে অশংগ্রহণ কারীরা শোকের প্রতীক কালো পোষাক পরিধান করে। কারবালার নির্মম হত্যাকান্ড ও ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসেন (রাঃ) শাহাদৎ বরণের শোকে কাতর হয়ে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা ধারারো ছোরাগুচ্ছ রশিতে বেধে নিজের শরীরেকে অবলীলায় রক্তাক্ত করে। ফলে বুক ও পিঠ থেকে ঝরছে রক্ত।
কারো কারো কালো জামা রক্তে ভিজে চুপসে গেছে আর সাদা জামা হয়ে উটে রক্তে লালে-লাল। তবুও ‘হায় হুসেন,হায় হুসেন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস। তাজিয়া মিছিলে বুক চাপড়ে, জিঞ্জির দিয়ে শরীরে আঘাত করে প্রকাশ করে হয় মাতম। ১০ মহরম বেলা ৩টায় পৃথিমপাশা নবাব বাড়ির হুসেন দালান থেকে তাজিয়া মিছিলসহ ‘হায় হুসেন, হায় হুসেন ’ ধ্বনিতে শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা নিজের শরীর রক্তাক্ত করে মিছিলটি রবিরবাজার পদ্মদিঘির পারে গিয়ে শেষ হয়।
তবে সম্প্রতি কুলাউড়ায় হাতির আক্রমনে নিহত ও হতাহতের ঘটনায় এবার তাজিয়া মিছিলে হাতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। এতে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত ছিল পৃথিমপাশার নবাব বাড়ি।
কুলাউড়ার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শামীম মুসার নেতৃত্বে থানা পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করে সর্বত্র। অনুষ্ঠানে কয়েক লক্ষ মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠা ঐতিহ্যবাহি নবাব বাড়ি। স্পর্শকাতর জায়গায় মোতায়েন করা হয় একাধিক পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ। পাশাপাশি র্যাবের কড়া নজরদারীতো ছিলোই। সবরকমের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো নবাব বাড়ি জুড়েই তৎপর ছিলো পুলিশ।
তাজিয়া মিছিলে অংশ নেওয়া সৈয়দ আশফাক তানভীরের সাথে কথা হয়, আপনার শরীরে বেশ রক্ত ঝরছে, এটা অনেক কষ্টের কাজ না! জানতে চাইলে তানভীর জানান, ‘যিনি ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার জন্য রক্ত ঝরানো কোনো কষ্টের কাজ না। কথা বলেই ‘হায় হুসেন , হায় হুসেন’ মাতম করতে থাকেন তিনি। কথিত আছে প্রায় ১ হাজার ৩৩২ বছর আগে আরবি মহরম মাসের ১০ তারিখ মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসেন (রাঃ) এবং তার ৭২ অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। সে দিন থেকেই দিনটি অত্যন্ত তাৎপযর্ম শোকাবহ, হৃদয় বিদারক হয়ে উঠে মুসলিম উম্মার জন্য এবং সত্য ন্যায় ও ইসলামের আদর্শকে উর্ধ্বে তুলে ধরার দিন ১০ মহরম। এ দিনের শোক স্মৃতিকে স্মরণ করে নানা বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র আশুরা হিসাবে পালন করে আসছে।
Posted ৭:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.