নাজমুল ইসলাম/জসীম চৌধুরী | মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০ | প্রিন্ট
হাকালুকি হাওর তীরে রকমারী সবজি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। ব্যাপক ফলন উৎপাদনে আনন্দের বন্যা বইছে হাওর পারের কৃষকদের মাঝে। হাওরের চারিদিকে যতদুর চোখ যায় শুধু সবজি চাষের সবুজ সমারোহ। বর্ষাকালে হাওর পানিতে টুইটুম্বর থাকলেও শীত কালে তা শুকিয়ে বিশাল বিরান ভূমিতে পরিনিত হয়। যার ফলে কৃষকরা নানা রকমের সবজি চাষের উপযোগি করে তোলে হাওরের জমি গুলো। ইতোমধ্যে অনেক চাষি এসব সবজি বিক্রি করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়,হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলা অংশের প্রায় গ্রামের মানুষ সবজি চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্থ সময় পার করেছেন কৃষকরা। হাওরের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় দুইশত পরিবার রকমারি সবজি চাষ করে যাচ্ছেন।
হাকালুকি হাওর এলাকার কুলাউড়া ও জুড়ী কন্টিনালা রাবার ড্রাম, বেলাগাঁও, শাহপুর, মদনগৌরী, গৌড়করণ ও ভাটেরার আশিঘর স্থানে কৃষকরা শীতকালীন সবজি ও গ্রীষ্মকালীন ফসলাধি ব্যাপকভাবে চাষ করছেন। কৃষকরা হাওর তীরে টমেটো, ধনিয়াপাতা, বেগুন, ফরাস, মিষ্টি কুমড়া,কাঁচা মরিছ, লাউ,আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি এছাড়াও তরমুজ, শসা, বাঙ্গি ও বাদাম চাষ করে তা বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
বেলাগাঁও গ্রামের কৃষক আবু তাহের এবার ১৪ বিঘা জমিতে ফরাস,মিষ্টি কুমড়া ও কাঁচা মরিছ চাষ করেছেন। এসব সবজি চাষে এবছর তাঁর ৫০-৬০ হাজার টাকা খরছ হলেও ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। মাঠে এখনও তাঁর অনেক সবজি মজুদ রয়েছে। সোনাপুর গ্রামের আরেক কৃষক শুকুর আলী প্রায় ১২ বিঘা জমিতে টমেটো ,বেগুন ও ধনিয়াপাতা চাষ করেছেন। এসব সবজি চাষে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও তিনি ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকার ফসল বিক্রি করেছেন।
মদনগৌরী,গৌড়করণ এলাকার জয়নাল আবেদীন জানান, প্রায় ৮ বিঘা জমিতে চীনা বাদাম,শসা ও তরমুজ চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে শসা ২০-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করলেও তরমুজ ও বাদাম আরও কিছুদিন পর গরম পড়লে তা বাজারে বিক্রি করা হবে। আশা করা যাচ্ছে তখন এইসব ফসল বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকার উপরে আয় করা যাবে।
এছাড়াও হাওর পারের বিভিন্ন এলাকার তৈমুছ আলী, ফরমুজ আলী, আরব আলী, সাইস্তা মিয়া,আলী আকবর, আতিকুর রহমান, কালা মিয়া, এরশাদ আলী, ফুয়াদ মিয়া, বাকী মিয়া,মছব্বির মিয়া, আলাউদ্দিন আলী, তাজুল ইসলাম,আব্দুর রহমান,খলিল মিয়া,সফিকুর রহমান,আব্দুল মান্নান,মেহেদী হাসান,আব্দুল করিম ও খালিদ মিয়া সহ প্রায় দুইশত পরিবার এই শীতকালে নানা রকম সবজি চাষ করে ব্যাপকভাবে সাফল্যের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আবার অনেক কৃষকরা দেখা যায় হাওরের মধ্যখানে ব্যুরো ধান রোপন করতে ব্যস্থসময় পার করছে।
তবে অধিকাংশ কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, নিজ উদ্যোগে তাঁরা এসব সবজি চাষ করলেও সরকারীভাবে কৃষি অফিস থেকে এখনো কোন ধরনের সাহায্য সহযোগীতা পাননি। আগে সি এন আর এস নামে একটি এনজিও সংস্থা মাঝে মধ্যে হাওরের কৃষকদের মাঝে বীজ,সার ও নানা কৃষি উপকরণ বিতরণ করলেও বর্তমানে তাদেরকে হাওর অঞ্চলে আর দেখা যায় না। কৃষকরা আরো বলেন, সরকারীভাবে যদি তাদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করা হয় তাহলে হাওর অঞ্চলের বসবাসকারী অনেক মানুষ এই কৃষি পেশাকে বেঁচে নিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
এব্যাপারে কুলাউড়া কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন,বীজ ও কৃষি উপকরণ সরকারীভাবে কোন বরাদ্ধ আমাদের কাছে নেই। তবে হাওরপারের কৃষকরা যদি কৃষি বিষয়ে সহযোগীতা বা পরামর্শ নিতে চায় তাহলে আমরা সর্বাত্মকভাবে সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাবো। ইতি মধ্যে অনেক কৃষক আমাদের কাছ থেকে কৃষি বিষয়ক অনেক সুপরামর্শ নিয়েছেন।
Posted ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.