আহমদউর রহমান ইমরান, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে : | বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের রাজনগরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বসতঘরে আগুন লেগে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে।
(২৫ এপ্রিল) বুধবার গভীর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভুজবল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে ভুজবল গ্রামের ওয়াছির মিয়ার বাড়িতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হন। তাদের প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মেয়ে শাহিনাকে (২৪) মৃত ঘোষণা করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মা রোকেয়া (৫৫) ও ছেলে মুন্না মিয়াকে (২৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার পথে শ্রীমঙ্গল মা রোকেয়ার মৃত্যু হয়। ছেলে মুন্না ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় লোকজন, মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস ও রাজনগর থানা পুলিশের তৎপরতায় আগুন নিভানো গেলেও বাঁচানো গেলনা মা মেয়েকে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আকস্মিক এমন অগ্নিকান্ডে মা মেয়ের মৃত্যুতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও ভয় ছেয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
আরও জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার নিহত শাহিনার সাথে ইতালী প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে পাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক ভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ঢলেপড়লেন মৃত্যুর কোলে। বাাঁচার আকুতি নিয়ে কলাপসিবল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন মা রোকেয়া ও মেয়ে শাহিনা। গেটের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে লোকজনের হাতে ধরছিলেন। কিন্তু গেটের তালা ভেঙ্গে বের করার আগেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন কলেজ ছাত্রী শাহিনা। কয়েকঘন্টা পর পুড়ে যাওয়া মা রুকেয়া বেগমও ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে।
শাহিনার পিতা প্রবাসী ওয়াছির মিয়া গত একবছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান। ওয়াছির মিয়ার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়ে ছিলেন। ছেলে মুন্না ও মেয়ে শাহিনা ছিলেন বিয়ের বাকি। শাহিনা মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং মুন্না মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন। শাহিনাকে তার ভাই মুন্না বৃধবার বিকালে নানার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রাম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরেই ঘটে মর্মান্তিক এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী রোকেয়া বেগমের প্রতিবেশি দেবর শামছুল হক (৫২) বলেন, গভীর রাতে বিস্ফোরনের শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন। বের হয়েই দেখতে পান রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার কলাপসিবল গেটের সামনে চিৎকার করছিলেন। তিনি সামনে যেতেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার বাঁচানোর আকুতি জানান। এসময় তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। বেরিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন। কলাপসিবল গেট তালা দেয়া থাকায় দরজা খোলা যাচ্ছিল না। ঘরে আগুন জ¦লছিল দাউ দাউ করে। পাশের বাড়ির একজন শাবল নিয়ে আসেন। এর আগেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তারের গায়ে আগুন ধরে যায়। গেটের তালা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেই পুড়ে যান মা মেয়ে। তালা ভেঙ্গে যখন বের করা হয় তখন তাদেও শরীর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ধরা যাচ্ছিল না।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ফ্রিজের পাশে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে কমপ্রেসার বিস্ফুরণ ঘটে। এতে ঘরে আগুন লেগে যায়। সে আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহিনা আক্তার ঘটনাস্থলে ও মা রোকেয়া বেগম ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। উভয়ের লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে।
Posted ৮:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.