মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

রক্তাক্ত কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মাওলানা এহসানুল মাহবুব জাকির,কুলাউড়া | শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট  

শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর দ্বিতীয় পুত্র খাতুনে জান্নাত মা-ফাতিমার কলিজার টুকরা রাহমাতুল্লিল আলামীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদরের নাতি বেহেশতী যুবকদের সরদার বাতিলের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর শহীদে কারবালা ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) চতুর্থ হিজরীর শাবান মাসের ৫ তারিখ পবিত্র মদীনা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে মরু অঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থানের নাম কারবালা নামক স্থানে শহীদ হন। কারবালা কুফা থেকে দু-মঞ্জিল দূরে অবস্থিত। প্রসঙ্গক্রমে আল্লামা শফী উকাড়বী (রহ.) উল্লেখ করেন-‘হযরত ইবনে সা’দ (রা.) হযরত সাবী (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী (রাদ্বি.) সিফফীনের যুদ্ধের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এ জায়গার নাম কি? লোকেরা বলল, এ জায়গার নাম ‘কারবালা’। কারবালার নাম শুনামাত্র হযরত আলী (রাদ্বি.) এমন কান্নাকাটি করলেন যে, মাটি চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। অতপর ফরমালেন, আমি একদিন প্রিয় নবীজির খেদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদতেছেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কাঁদতেছেন কেন? উত্তরে রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমালেন-এইমাত্র জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন যে, ইন্না ওলদিয়াল হুসাইনা ইয়ুক্বতালু বিশাতিল ফোরাতি বিমাওদ্বাইন ইয়ুক্বালু লাহু কারবালা। অর্থাৎ ‘আমার ছেলে (দৌহিত্র) হুসাইনকে (ইরাকের) ফোরাত নদীর তীরে সেই জায়গায় শহীদ করা হবে, যে জায়গার নাম কারবালা।’
কেন এ ঘটনা?

আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন এ হৃদয় বিদারক ঘটনার মূল কারণ। তবে ইতিহাসের দিকে তাকালে এ ঘটনার অন্তর্নিহিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাষ্ট্রযন্ত্র সে সময়ে যারা কুক্ষিগত করেছিল তারা ক্রমাগত পবিত্র কুরআন হাদিসে বর্ণিত নীতিমালা হতে দূরে সরে যাচ্ছিল। ন্যায়ের প্রতীক ইমাম হুসাইন (রা.) জানতেন মুসলমানদের শাসক কোনো জালিম, ফাসিক, স্বেচ্ছাচারী, সীমালংঘনকারী হতে পারে না। খেলাফতের মসনদে ঐ ধরণের ব্যক্তিকে তিনি স্বীকৃতি দেন নি। তাঁর পবিত্র খেদমত থেকে ইয়াজিদের মত পাপাচারীকে খলিফা বলে স্বীকৃতি আদায় করতে না পারাটাই কারবালার ঘটনার অবতারণা।
কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বি.)-র ইন্তিকালের পর ইয়াজিদ সিংহাসনে আরোহণ করার পর পরই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে হযরত ইমাম হুসাইন (রাদ্বি), হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রাদ্বি.) ও হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদ্বি.) প্রমুখ থেকে বাইয়াত নেওয়ার আবেদন করলে তারা সুস্পষ্টভাষায় তা অস্বীকার করলেন। ইয়াজিদ বাইয়াতের ব্যাপারে চাপাচাপি শুরু করলে ইমাম হুসাইন (রাদ্বি.) সকলের সাথে পরামর্শ করে বাকী জীবন পবিত্র মক্কায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। পবিরার-পরিজন নিয়ে চলে গেলেন তথায়। আল্লাহর বাণী ওমান দাখালাহু কানা আমিনা অর্থাৎ যে ব্যক্তি হেরেম শরীফে প্রবেশ করল, সে নিরাপদ আশ্রয়ে এসে গেল, এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
কিন্তু বিধির বিধান হয় না লঙ্গন। মক্কা শরীফ আসার পর পর কুফাবাসীদের পক্ষ থেকে অনুনয়-বিনয় করে বিশ্বনবীর দোহাই দিয়ে ১৫০ মতান্তরে ১২০০ চিঠি ইমামের নিকট প্রেরণ করা হলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুসারে বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হলেন। কুফাবাসী বাস্তবিকই তাঁকে চায় কি চায় না এর সঠিক রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে প্রেরণ করলেন। অল্প দিনের মধ্যে ইমাম হুসাইনের পক্ষে চল্লিশ হাজার লোক ইমাম মুসলিমের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করল। ইমাম মুসলিম দূত মারফত চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন ‘কুফার অবস্থা খুবই সন্তোষজনক।’
ইয়াজিদ এ সংবাদ পেয়ে কুফার গভর্নর নোমান বিন বাশির যিনি ইমাম মুসলিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন নি, তাকে বরখাস্ত করে উবায়দুল্লাই ইবনে যিয়াদকে নির্দেশ দিল, তুমি বসরার গভর্নরও থাকবে পাশাপাশি তোমাকে কুফারও গভর্নর নিয়োগ করা হল। তুমি ইমাম মুসলিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কর। ইবনে যিয়াদ ছিল যালিম ও কঠোর প্রকৃতির লোক। সে কুফায় এসেই ইমাম মুসলিমের চল্লিশ হাজার অনুসারী থেকে নেতৃস্থানীয়দেরকে গ্রেফতার করে গভর্নর ভবনে বন্দী করে রাখলো। ইমাম মুসলিম সকলের সাথে পরামর্শ করে গভর্নর ভবন ঘেরাও করলেন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে ইমাম মুসলিম ইশারা দিলেই গভর্নর ভবন ধুলিসাৎ হয়ে যেত। ইবনে যিয়াদের নির্দেশে বন্দীরা গভর্নর ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে বলল, তোমরা যদি ঘেরাও প্রত্যাহার না কর, তবে আমাদের জবাই করা হবে। ঘোষণা শুনার সাথে সাথে ইমাম মুসলিমের ৪০ হাজার অনুসারী থেকে দলে দলে লোক বাড়ি ফিরল। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রায় উনচল্লিশ হাজার চলে গেল। মাগরিবের আযান দিয়ে ইমাম মুসলিমের ইমামতিতে প্রায় ৫০০ লোক নামাজে দাঁড়ালো। তিন রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ইমাম মুসলিম পিছনে একজনকেও দেখতে পেলেন না। হায়রে কুফাবাসী! কি নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতা!! এখানে ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচিত হলো। ইবনে যিয়াদ অসহায় ইমাম মুসলিমকে গ্রেফতার করে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করে দিল।
যেদিন ইমাম মুসলিম (রা.)-কে শহীদ করা হয় সেদিন ইমাম হুসাইন (রা.) তাঁর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী পুত্র, ভাই ভাজিতা এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ প্রায় ৮৩/৭৪ জনের একটি কাফেলা নিয়ে মক্কা শরীফ থেকে কুফার দিকে রওয়ানা দিলেন। পথে সংবাদ পেলেন চাচাত ভাই ইমাম মুসলিমকে শহীদ করে দিয়েছে ইবনে যিয়াদ। ইমাম হুসাইন (রা.) পিছপা হলেন না, সম্মুখে অগ্রসর হয়ে কুফা থেকে দু-মঞ্জিল দূরে কারবালা প্রান্তরে উপনীত হলেন। এখানে পৌঁছামাত্র হুর বিন ইয়াজিদ একহাজার সৈন্য বাহিনী নিয়ে ইমামের পথরুদ্ধ করলেন। যথারীতি সম্মানপূর্বক আবেদন জানালেন, জনাব কুফার নতুন গভর্নর ইবনে যিয়াদ আপনাকে গ্রেফতার করে তার নিকট নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে। ইমাম সাহেব বললেন, কেন? হুর বললেন, আপনি নাকি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করেছেন। ইমাম হুসাইন (রা.) বললেন, কুফাবাসী আমাকে অসংখ্য চিঠি দিয়েছে এখানে আসার জন্য। লেখক:- শিক্ষক


Facebook Comments Box


Comments

comments

advertisement

Posted ৩:০৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত