বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | প্রিন্ট
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করছেন ইশরাত নাহের। তার গবেষণার বিষয় ‘যৌনশিক্ষা ও মানসিক স্ব্যাস্থ্য’। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর তিনি নিজে একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছেন। এই প্রকল্পে ইশরাত কাজ করছেন বন্ধ্যাত্ব, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, গর্ভপাত, পিরিয়ড, প্রজনন স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকাল ও মাতৃত্ব নিয়ে। তার এই গবেষণা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে গবেষণার জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন ইশরাত নাহের।
১২ সেপ্টেম্বর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডশেন প্রকাশিত ‘ওয়ানটোয়েন্টি আন্ডার ফরটি: দ্য নিউ জেনারেশন অব ফ্যামেলি প্ল্যানিং লিডার’ পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় বাংলাদেশের ইশরাত নাহেরের নামটিও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ গত বছর থেকে পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষক বাছাইয়ের এক আয়োজন করছে। সারা বিশ্ব থেকে এ বছর নির্বাচন করা হয়েছে ৪০ জন তরুণকে। নির্বাচনের ভিত্তি ছিল অনলাইন ভোট এবং বিচারকমণ্ডলীর দেওয়া নম্বর। ধাপে ধাপে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২০ জন নির্বাচিত হবেন, যাঁরা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথে নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
ইশরাত নাহের বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজে বেড়ে উঠেছি, যেখানে নারীদের অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা আসে। আমাদের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থায় সেক্স এডুকেশনকে এখনো ট্যাবু হিসেবে ধরা হয়। আমরা এটা নিয়ে কথা বলি না। লজ্জা পাই। অন্যকে জানাই না। তাই তো ইশরাত মনে করেন, এ রকম আয়োজনে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা অনেক আশার আলো দেখায়।
এ রকম বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ইশরাত নাহেরের কোনো বাধা ছিল না। জানালেন কাজের ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা তার বাবা। আশপাশের মানুষও তাঁকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
ইশরাত নাহের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাগরদীঘি সড়কের বাসিন্দা । বাবা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সম্পাদক সাহিদ হোসেন ইকবাল এবং মা রওশন ইকবাল। চার ভাইবোনের মধ্যে ইশরাত সবার বড়। কাছের মানুষদের কাছে তিনি ইরিনা নামেই পরিচিত।
পড়াশোনা শ্রীমঙ্গলের দ্য বাডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ফার্মেসিতে স্নাতক হয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষানবিশি করেছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডে। আগামী মাসেই (অক্টোবরে) স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য পাড়ি দেবেন জার্মানিতে।
বন্ধ্যাত্ব ব্যবস্থাপনা ইশরাতের কাজের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এ নিয়ে অনেক নারী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সন্তান না হলে পরিবার, সমাজ প্রথমেই নারীর দোষ দেয়। এটা যে নারীর একার কোনো দুর্বলতা না, সে ব্যাপারে অনেকেই সচেতন নন। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই শিশু-কিশোরদের অনেক মানসিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের অনেক কিছুই জানতে দেওয়া হয় না। বয়ঃসন্ধিকালে শিশুরা সব জানবে। কিন্তু প্রশ্ন করলে তাদের বলা হয়, ‘এসব তোমাদের জানার দরকার নেই।’ একটা অন্ধকার পথে হাঁটতে হয় শিশু-কিশোরদের। এ ক্ষেত্রে নারীদেরই ঘরে-বাইরে সমস্যা বেশি।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসতে চান ইশরাত। নিজের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশের গবেষণা খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে চান। এ ক্ষেত্রে তার কিছু পরিকল্পনা আছে। বললেন, ‘স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। কাউন্সেলিং ও লেখালেখি করতে চাই।’
Posted ৮:০২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.