মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

মনুর নদীর ভাঙনে মৌলভীবাজার শহর প্লাবিত

বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | রবিবার, ১৭ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট  

মনুর নদীর ভাঙনে মৌলভীবাজার শহর প্লাবিত

ছবিঃ মৌলভীবাজার কুসুমবাগ এলাকা।

মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়হাটের কাছে বাড়ইকোনা নামক স্থানে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধে ৪০ ফুট ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলার ১০/১৫টি এলাকা। শহরের বড়হাট এলাকার বাসা-বাড়িতে কোমর-পানি, বুক পানি রয়েছে। এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে শহরের চারটি খাদ্য গোদাম, উপজেলা চত্তর। এমতাবস্থায় আক্রান্ত এলাকার লোকজন বাসার ছাদে, দু’তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাড়ীর বদলে শহরে নৌকা চলছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের পশ্চিম বাজারের বাটার দোকান পর্যন্ত সড়কের উপর পানি ছিল।


জানা যায়, গত ৪ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন সম্ভাব্য ভাঙন স্থলে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু শনিবার রাত ১২টার দিকে পৌর এলাকার বাড়ইকোনা দিয়ে হঠাৎ শহররক্ষা বাঁধের একটি ছিদ্র দিয়ে পানি বের হওয়ার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্টরা বালুর বস্তা নিয়ে হাজির হয়। এই বস্তা ফেলার কিছু সময়ের মধ্যেই ভাঙ্গন দেখা দেয়। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন এর আগেই সেনাবাহিনীসহ এই বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু কোন আলামত মিলেনি। ভোরবেলা বড়হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষজন ছাদের উপরে কেউ দু’তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড পরিশ্রম করছিলেন শহর রক্ষার জন্য। বড়হাটের তার নিজ বাসায় এখন পানি। জানালেন পৌরসভার ৬, ৯ সম্পূর্ণ এবং ৮নং ওয়ার্ড আংশিক এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি জেলা কার্যালয়ে কোমর পানি। কুসুমবাগ ও উপজেলায় অবস্থিত চারটি খাদ্য গোদামে পানি প্রবেশ করেছে। চাইল ও গম মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য রয়েছে এই গোদামে।

ছবিঃ মৌলভীবাজার পৌর শহর


জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাশ গণমাধ্যমকে জানান, পানির ¯্রােতের কারণে গোদামের গেইট খোলা যাচ্ছে না। প্রায় আড়াই কোটি টাকার খাদ্য মজুদ আছে এই চারটি গোদামে। কিছু নষ্ট হতে পারে।

এদিকে তীব্র পানির স্রোতে বিপাকে পড়েছেন আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দারা। একটু সময়েই পানি হাটু ও কোমর পর্যন্ত পৌছে যায়। বড়হাট এলাকার বাসিন্দা পৃত্তিরাজ দত্ত পরিবারের সদস্য দুজন নিয়ে পানি ভেঙ্গে শহরের দিকে আসছিলেন, তিনি জানান ভাঙ্গন তার বাসার কিছু দুরে। বাসায় এখন বুক পানি। মালামাল কিছু সরানো যায়নি। খাট, পালং, ফ্রিজ, টিভি বাসায় ভাসছে। পশ্চিম বড়হাটের মো. সুরেশ আলী (৫৫) জানান বাসায় পানি থাকায় পরিবারের সদস্যরা বাসার ৪ তলার ছাদে রাত থেকে আছে। বের হয়েছেন কিছু খাবার সংগ্রহ করার জন্য। বড়হাট ঐরাকার উর্ম্মি রাণী দাশ (৪৫) কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বুকের সাথে আটকিয়ে পানির মধ্যে দিয়ে ভিজে আসছিলেন কুসুমবাগ পেট্রোল পা¤েপর সামন দিয়ে। জিজ্ঞেস করতেই হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে দেন। জানান বাসার সব জিনিস পানিতে ভিজে গেছে। বাসায় এখন কোমর পানি। সব ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছেন।


অপরদিকে শহররের মূল অংশ নিরাপদ রাখতে কুসুমবাগ শপিং সিটির সামনে রাস্তার পাশের নিচু জায়গায় কিছু বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সকালের দিকে একদল তরুণ এসে এই বাঁধ তুলে দেন। এতে মুহূর্তেই শহরের পূর্বদিকে পশ্চিম বাজার পর্যন্ত পানি চলে আসে। বাধ তুলে দেয়ার সময় কয়েকজন পুলিশ তাদের বাঁধা দিতে চাইলে তারা মারমুখি হয়ে উঠে এবং বলতে থাকে আমারা ক্ষতিগ্রস্থ হবো আর অন্যরা ভাল থাকবে তা হবে না।

ছবিঃ কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মনবার- টিলাগাও সড়ক।

এদিকে রাজনগর উপজেলার মনুনদীর বিভিন্ন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে। মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কে এখনো পানি রয়েছে। মানুষ পায়ে হেটে রাস্তা পার হতেও ভয় পাচ্ছে ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, সবচেষ্টা করেও ভাঙ্গন ঠেকানো গেল না। বাড়ইকোনার পয়েন্টটি পূর্বে চিহ্নিত করা যায়নি। সর্বাঙ্গে ব্যাথা ঔষধ দিব কোথা এমন অবস্থা হয়েছে। জানান এটি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে বস্তা নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ফেলাও হয়। এই মধ্যেই রাত সাড়ে ১২টা বা ১ টার দিকে ভেঙ্গে যায় প্রায় ৪০ ফুটের মতো জায়গা। জানান নদীর পানি কিছু কমছে। মনু নদীর পানি চাদনীঘাট পয়েন্টে এখন ১৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মনু স্টেশনে ৪০ সেন্টিমিটার উপর এবং কুশিয়ারা শেরপুরে ৩৯ সেন্টিমিটার উপরদিয়ে এবং ধলাই ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সংবাদমেইল২৪.কম/এনআই

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৯:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ জুন ২০১৮

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত