নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা | শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আমন মৌসুমে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার কেছরিগুল গ্রামের কৃষক রুহেল মিয়ার কাছ থেকে এক টন ধান কেনার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে প্রান্তিক, মাঝারি ও বড় শ্রেণীতে কৃষকদের আলাদা করে লটারি করা হয়। ১৯৪৮ জনের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৯৬০জন কৃষককে বাছাই করা হয়েছে। সরকারিভাবে ধান কেনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেতে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর সরকারের ধান সংগ্রহে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেন কৃষকরা। যাদের জন্য এই সংগ্রহ অভিযান সেই কৃষকরাই এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। দালাল, ফড়িয়া ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে সরকারের গুদামে ধান দিতে সত্যিকারের কৃষকরা ছিলেন কোণঠাসা। এই সমস্যা দূর করতেই এবার সারা দেশে লটারির মাধ্যমে কৃষকদের বাছাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বছর রোপা আমন চাষের লক্ষ্য ধরা হয় ৮১৩৮ হেক্টর জমি। মাঠপর্যায়ে চাষ হয়েছে ৮৫৪০ হেক্টর। এবার বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। বর্ষার পানি তাড়াতাড়ি নেমে যাওয়ায় হাওর এলাকার তিনটি ইউনিয়ন বর্ণি, তালিমপুর ও সুজানগর এলাকায় ভালো ফলন হয়েছে। নিচু এলাকায় পানি দ্রুত চলে যাওয়া সময়মতো ধান রোপন করতে পেরেছেন কৃষকরা। বিআর-২২ জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩২ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এবার বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। এছাড়া আমরা (কৃষি বিভাগ) নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের সাথে আলোচনা করে পরামর্শ দিয়েছি। আলোক ফাঁদের মাধ্যমে উপকারি ও অপকারি পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর উপযুক্ত বালাই নাশক ব্যবহার করা হয় ধান ক্ষেতে। এসব কারণে অন্য বছরের থেকে এবার ধান ভালো হয়েছে।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে একজন প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। বড়লেখায় এবার সরাসরিভাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে ৯৬০ মেট্রিক টন ধান। ২৬টাকা কেজি ধরে সরকার প্রতি টান ধান ক্রয় করছে ২৬ হাজার টাকায়। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ৩ বস্তা (১২০ কেজি) থেকে সর্বোচ্চ ১ মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা।
বড়লেখা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক সূত্র ধর বলেন, ‘প্রথমদিন এক টন নেওয়া হয়েছে। আরো কিছু ধান এসেছে। এগুলোর মান যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই করে ভালো মানের ধান নেওয়া হবে। এবার লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করা হয়েছে। এ তালিকা থেকে কৃষকদের ধান নেওয়া হবে। তালিকার বাইরের কারো ধান নেওয়া হবে না।’
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে খাদ্য গুদাম প্রাঙ্গণে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান, কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল আউয়াল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক সূত্র ধর, বিএসটিআই সিলেট কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত, খাদ্য পরিদর্শক মো. মফিজুর রহমান, সহকারী খাদ্য পরিদর্শক প্রানেষ লাল বিশ্বাস, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সুমন আহমদ, কৃষক রুহেল মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ৪:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৯
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.