মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

ফিরে আসা নাড়ীর টানে

আব্দুল বাছিত বাচ্চু :- | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯ | প্রিন্ট  

ফিরে আসা নাড়ীর টানে

৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে খেলাম বড় ধাক্কা। কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী করা হয়নি।খোঁজ নিয়ে জেনেছি শুধু পেশিশক্তি, অর্থের জোর আর বড় নেতাদের পছন্দের প্রার্থীরা মনোনয়ন পেলেন। জেলা নেতৃত্ব আমাকে আশ্বস্ত করলেন কলেজ কমিটিতে মুল্যায়ন করবেন। আমি সে মূল্যায়নের অপেক্ষা না করে সিদ্ধান্ত নিলাম সাংবাদিকতা করবো। যেখানে টাকা নয়, কলম হবে মুল শক্তি।

বড়ভাই সারোয়ার আহমদ ছিলেন বাংলাবাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। পত্রিকাটির একটি পাতায় জনতার মঞ্চ নামে কলাম চালু ছিলো। ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আমার বিতৃষ্ণার কথা সেখানে তুলে ধরি। কলাম লিখার সুবাদে এবং নিজের সম্পাদনায় ‘শিশির’ নামক অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা বের করার পর থেকে উনার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠা। একদিন সার্কুলার পেলাম খবর পত্রিকার জন্য সিলেট বিভাগে জেলা উপজেলা প্রতিনিধি নেওয়া হবে।সারোয়ার ভাই সার্কুলার পড়ে একটি চিঠি দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সিলেটের বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান রাজ্জাক ভাইয়ের কাছে। রানিং স্টুডেন্ট হওয়াতে তিনি আমাকে কাজ করার অনুমতি দিলেন। শুরু হলো সাংবাদিকতার জীবন। একদিন দুপুরে জানলাম কুলাউড়ায় ভাটেরা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের গার্ডকে ছাত্ররা মেরেছে। চলে গেলাম কুলাউড়ায়। পূর্বপরিচিত জাকারিয়া আলম মিন্টুর সহযোগিতায় রিপোর্ট কালেকশন করে টেলিফোনে পাটালাম। তখন কুলাউড়া শহরে ফ্যাক্স ইমেইল ছিলো না। এনালগ টেলিফোন ব্যবস্থার মধ্যমেই সাংবাদিকেরা কাজ করতেন। ফিরে আসার পথে দেখা হয় জনাব এম এম শাহীনের সাথে( পরবর্তীতে এম পি)। লিলি সিনেমা হলের গেইটে একটি ঘড়ির দোকানে বসে গল্প করছেন। জাকারিয়া আলম মিন্টু সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর অনেক সম্মান স্নেহ করলেন আর জানালেন তিনি একটি পত্রিকা বের করবেন।


পড়াশোনা আর সাংবাদিকতা ভালোই চলছিলো। সিদ্ধান্ত নেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়বো। এলো কাঙ্খিত এইচএসসি পরীক্ষা। মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ায় আত্মবিশ্বাস ছিলো পাশ করবো। তাই দেরি না করে চলে গেলাম আবারো সিলেটে। সেখানে লজিং নিয়ে শুরু করলাম পরবর্তী প্রস্তুতি। সান্নিধ্য পেলাম প্রয়াত সাংবাদিক জীতেন সেন, আল আজাদ, সালাম মশরুর ভাইয়ের। প্রত্যেকেই স্নেহ করতেন। বিকেল হলেই চলে যেতাম মহসিন ভাইয়ের অফিসে। তিনি ছিলেন রুপালী পত্রিকার প্রতিনিধি।

একদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। আমি ৫৫২ নম্বর পেয়ে মানবিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হলাম। ফর্ম ফিলাপের দিন ৬০ টাকা সাথে না থাকায় চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে ফর্ম পূরণ করেছিলাম। সেদিন যুক্তিবিদ্যা বাদ দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়েছিলো। লজ্জা ছেড়ে বন্ধুদের কাছ থেকে ৬০ টাকা ধার নিয়ে চতুর্থ বিষয়সহ ফর্ম পূরণ করলে হয়তো প্রথম বিভাগ পেতাম। কারণ শিক্ষাজীবনে দীর্ঘ বিরতি ইংরেজি বিষয়ে আমাকে কিছুটা দুর্বল করে ফেলে।


শুরু হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া। ৯০০ নম্বর হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যেতো। কিন্তু ঘ ইউনিটের শর্ত বাংলা ও ইংরেজি মিলে ২০০ নম্বর থাকতে হবে। আমি বাংলায় (৬০+৬০) ১২০ নম্বর পেলেও ইংরেজি বিষয়ে পেলাম মাত্র ৪৩+৩৫=৭৮ নম্বর। কিন্তু কেনো এমন হয়েছিলো জানি না। এই ২ মার্কের জন্য (৬৬০+৫৫২)=১২১২ নম্বর পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারিনি। পরে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাই না করে এম সি কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। চলে সাংবাদিকতাও। দৈনিক মানচিত্র বের হলে বার্তা সম্পাদক ছিলেন জীতেন দা। আমি লেখালেখির গতি বাড়িয়ে দিলাম।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে আসি।এক বিকেলে আপা (বড়বোন)অফিস থেকে ফিরে হাতে ধরিয়ে দিলেন নতুন কাগজ মানব ঠিকানা। দেখলাম কুলাউড়াবাসীর সাতদিনের কাগজ। সম্পাদক জাবেদ খসরু আর সভাপতি সাবেক এমপি এম এম শাহীন। মনে পড়লো ৯৫ সালে প্রথম দেখাতেই বলেছিলেন এই স্বপ্নের কথা। নিমিষেই পুরো পত্রিকাটি পড়ে নিলাম। ম্যাকআপ গ্যাটআপ সুন্দর কিন্তু আরো ভালো খবর থাকতে পারতো।


নতুন ভাবনা আমাকে পেয়ে বসে। সিলেটে অনেক ভালো লিখলেও ফায়দা হবে সেখানের লোকজনের। আর কুলাউড়ায় থাকলে কাজ করতে পারবো এলাকার জন্য। পরদিন লোকাল ট্রনে কুলাউড়া যাই। দেখা করি বাসায়। আমার আগ্রহ দেখে তিনি কাজ করার সুযোগ দিলেন। কিছু যাতায়াত খরছও নির্ধারিত করে দিলেন। মাসে পনেরো শত টাকা।

আমি পরদিন থেকে কাজ শুরু করি। সকালে বাসে যেতাম আর রাতে লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফিরতে হতো। ডেস্কে সহকারী সম্পাদক সিপার ভাই ছিলেন সিনিয়র। আমাকে দেওয়া হয় বার্তা সম্পাদক। আর আমার সাথে সার্বক্ষণিক ছিলেন সৈয়দ আবেদ, রিয়াদ আহাদ, কয়ছর রশীদ,তুতিউর রহমান ও সার্কুলেশন ম্যানেজার আজিজুল ইসলাম এবং বিভাগীয় সম্পাদক শহীদুল ইসলাম তনয়। ময়নুল হক পবন প্রতিনিধি হিসেবে থাকলেও ডেস্কে হেল্প করতেন। আরো হেল্প করতেন এম মছব্বির আলী,শরদিন্দু চৌধুরী এম এ কাদির। পরে মানব ঠিকানা পরিবারে এসে যুক্ত হলেন পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক মুহিবুর রহমান বুলবুল, বাবু স্বপন কুমার দেব, চৌধুরী আবু সাঈদ ফুয়াদ ,এম এম আহাদ, বকুল খান,নাজমুল হোসেন,প্রভাষক মাঞ্জারুল হক,বিশ্বজিৎ দাস,মোক্তাদির হোসেন, কামরুল হাসান, মো নাজমুল ইসলাম, জসিম চৌধুরী, আলাউদ্দিন কবির,মাহফুজ শাকিল,লুৎফুর রহমান রাজু,এম আর তাহরীম,বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।

আর প্রতিনিধি ছিলেন আলম সাইফুল, শাহ আলম শামীম,জাহাঙ্গীর আলম,মোঃ তাজুল ইসলাম, এম এ কুদ্দুস, প্রয়াত সৈয়দ তোফায়েল হোসেন, মো. তাজুল ইসলাম, আলী হোসেন, ইসহাক চৌধুরী ইমরান, সিরাজ মিয়া,সাইফুল ইসলাম কাজল, এম এ রব, সৈয়দ আশফাক তানভীর, এ কে উজ্জ্বল , জয়নাল আবেদীন,ফখরুদ্দীন, সাইফুল, খলিলুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম, হারিছ মিয়া, আরব আলী, এম সামসুল হক, হারিছ মোহাম্মদ, ইমতিয়াজ মারুফ, এম ইদ্রিছ আলীসহ অনেকেই।

প্রথমদিকে আমার সহকর্মীরা আমার বিষয়ে ভুল ধারণা পোষণ করলেও কিছুদিনের মধ্যে আমরা ঘনিষ্ট হয়েছিলাম। কাজ করেছি তৃণমূল মানুষের জন্য।পেরেছিলাম মানব ঠিকানা কে একুশ শতকের পাঠকের উপযোগী জনপ্রিয় সাপ্তাহিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সোমবার এলে মানুষ এই কাগজের জন্য মুখিয়ে থাকতো।কাগজের মালিক এম এম শাহীনের( সাবেক এমপি) পরিবার এবং সহকর্মীরা আমাকেও কুলাউড়ায় একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হিসেবে গড়ে উঠতে যে সহযোগিতা করেছেন এই ঋণ শোধ হবার নয়। দিয়েছেন সম্মান, দিয়েছেন সম্মানি।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সৈয়দ জামাল, জাসদ নেতা গিয়াস উদ্দিন আহমদ,মিসেস নেহার বেগম, মইনুল ইসলাম শামীম সহ সুশীল সমাজ, শিক্ষক, রাজনীতি বিদ ক্লাব সংগঠন এমন কোনো সেক্টর নেই যারা সহযোগিতা করেনি। (চলবে)

লেখক:- সাংবাদিক ।
সাবেক সভাপতি, প্রেসক্লাব কুলাউড়া।
চেয়ারম্যান, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ।

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৪:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত