মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

চেষ্টা করেও আমার আম্মুকে বাঁচাতে পারলাম না!!

তাজুল ইসলাম,সংবাদমেইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট  

চেষ্টা করেও আমার আম্মুকে বাঁচাতে পারলাম না!!

সিলেটে নিজের বড় মেয়ের বাড়ি থেকে কুলাউড়া আসার জন্য দুপুরে ঘর থেকে বের হোন মনোয়ারা পারভীন (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। কিন্তু স্টেশনে প্রবেশ করার আগমুহূর্তে সিলেট থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়। পারাবত ট্রেন সময়মতো ধরতে না পারায় তাঁরা রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। আর এই যাত্রাই কাল হলো তাঁর জন্য।

কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় বড়ছড়া ব্রীজের উপর ট্রেনটি দুর্ঘটনার শিকার হলে তিনি মারা যান। এসময় তাঁর সহযাত্রী নিজের দ্বিতীয় মেয়ে কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা পারভিন প্রাণপণ চেষ্টা করেও মাকে বাঁচাতে পারেননি। নিজ চোখের সামনে মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মেয়ে রুকশানা।


রবিবার রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। মনোয়ারা পারভিন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ঠিকাদার মো. আব্দুল বারীর স্ত্রী।

জানা যায়, গত ২২ জুন শনিবার দুপুরে পারাবাত ট্রেনে মনোয়ারা পারভিন তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্রী রুকশানা পারভিনকে সাথে নিয়ে তাঁর বড় মেয়ে ইশরাত আরা মুন্নির সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন।


রবিবার (২৩ জুন ) নিহত মনোয়ারার একমাত্র ছেলে সিলেট শাহজালাল সিটি কলেজের ছাত্র শাহরি আহমদ দীপু সিলেট থেকে তার মা ও বোন রুকশানাকে একটি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে সিলেট স্টেশনে পাঠায়। সেখানে তারা বিকেলে পারাবত ট্রেন কুলাউড়ায় ফেরার কথা ছিলো। পারাবত ট্রেন সময়মতো ধরতে না পারায় তাঁরা রাতের উপবন ট্রেনে উঠেন। এরপর ট্রেন কুলাউড়ার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় আসার পর দুর্ঘটনার শিকার হলে ট্রেনের বগি উল্টে পড়ে যায়।

এ সময় নিহত মনোয়ারার মেয়ে রুকশানা তাঁর মাকে উদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। সাথে সাথে তাঁর বাবাকে ফোন দেয়, ‘বাবা আম্মা মারা গেছেন, গাড়ি থেকে উনাকে বের করতে পারছিনা।’ খবর পেয়ে মনোয়ারার স্বামী কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল বারী ঘটনাস্থলে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে পাননি। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁর লাশ উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।


মনোয়ারার স্বামী আব্দুল বারী তাঁর লাশ শনাক্ত করে মরদেহ কুলাউড়ার টিটিডিসি এলাকায় বাসায় নিয়ে আসেন। মরদেহ বাসায় আনার পর শোকের মাতম শুরু হয়। তাঁকে এক নজর দেখার জন্য বাসায় সহস্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে। সোমবার বিকেল ৫টায় মো. আব্দুল বারীর গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রামে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত মনোয়ারা পারভীনের মেয়ে রোকসানা পারভীন বলেন,আম্মুকে বাঁচানোর কতো চেষ্টা করেছি। কতো চেষ্টা করেও আমার আম্মুকে বাঁচাতে পারলাম না। “আম্মু যখন ট্রেনের নিচে আটকে পড়ল, তখন কতজনের হাতে–পায়ে ধরে বলেছি, হেল্প মি, হেল্প মি। সহযোগিতা না করে সবাই সেলফি তোলা আর ফেসবুক লাইভ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। তামাশা শুরু করলো। কেউ আমাকে সহযোগীতা করতে এগিয়ে এলোনা। আমি আপনাদের(সাংবাদিকদের) সঙ্গে কথা বলতে চাই না। প্লিজ,আমাকে বিরক্ত করবেন না।” আমার চোখের সামনে আমার আম্মু মৃত্যুর খোলে ঢলে পড়লো।

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৫:৩৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত