মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুন:স্থাপন কাজের উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদী

নাজমুল ইসলাম,জসীম চোধুরী সংবাদমেইল২৪.কম | সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট  

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুন:স্থাপন কাজের উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদী

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুন:স্থাপন কাজের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার বিকেল ৫টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দিল্লী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।


এ সময় আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ (বাংলাদেশ অংশ) নির্মাণ প্রকল্প এবং বাহারামপুর-ভেড়ামারা বিদ্যুৎ সংযোগ এইচভিডিসি ইন্টার কানেকশন প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে পশ্চিম বঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বক্তব্য রাখেন।


বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সুসম্পর্কের কথা তুলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম। আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো।’

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বাসন প্রকল্পেরও নির্মাণ কাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলায় তিনি একথা বলেন। যদিও অনুষ্ঠানে বাকি বক্তব্য হিন্দিতে দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।


নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ইতিহাসের ‘সোনালী অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথা জানান।

অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তার বক্তব্যে বলেন, তিনি বাংলাদেশকে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চান। তিনি বলেন, ‘গতবার শেখ হাসিনা জি আমাদের এখানে এসেছিলেন। তখন একটা বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল যে তাঁরা যদি আমাদের কাছে বিদ্যুৎ চান তাহলে বাংলা আরও বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য রাজি আছে। যদি ভারত সরকার অনুমতি দেন তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে রাজি আছি।’

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বাড়াতে চান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। কারণ বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। আমরা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে। সুতরাং দুইদেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাক।’

‘ছিটমহল চুক্তি, ইন্দো-বাংলাদেশ বাস, ট্রেন সার্ভিস; আমরা যে ইন্দো-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটানের মধ্যে রোড সার্ভিস চালু করতেছি তা যুগান্তকারী প্রকল্প। এতে আমাদের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।’
বক্তব্যের শেখ পর্যায়ে গানের কয়েকটি লাইন গেয়েও শোনান মমতা। গানটি ছিল, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি। তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী। ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে/তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।’

অনুষ্ঠানে ছিলেন ত্রিপুরার নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও। তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতি ও আর্থিক যোগসূত্র রয়েছে। যা বহুকাল ধরে চলছে। এ প্রকেল্পের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন নর্থইস্টকে অষ্টলক্ষ্মীতে তৈরির প্রকল্পে বল পাবে। এতে নর্থ ইস্টরের জনগণের উন্নয়নের নতুন দিশা পাবে।’ ‘ত্রিপুরা- আখাউড়া সীমান্তে লোড আনলোডিং এ যে বাড়তি খরচ দিতে হয়, তাতে দুই দেশই আর্থিকভাবে লাভবান হবে।’

এ উপলক্ষে কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন এমপি, সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস সহিদ এমপি,মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন, জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোঃ শাহজালাল,জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ,সাধারণ সম্পাদক মিছবাুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর, জুড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান গুলশান আরা মিলি,কুলাউড়া পৌর মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছসহ রেলওয়ে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলের পুরাতন ব্রিজ ও রেল লাইন উঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতেই বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণভাগ এলাকায় দু’টি ইয়ার্ড তৈরি করাসহ প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর বুধবার রাজধানীর রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ভারতের কালিন্দী রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের (টেক্সমাকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিডেটের একটি বিভাগ) সঙ্গে এই চুক্তি হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) আব্দুল হাই ও ভারতের কালিন্দী রেল নির্মাণের ভাইস প্রেসিডেন্ট শারদ শর্মা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই দ্বৈত গেজ লাইনে পুনর্বাসন করা হবে। এর মধ্যে সাত দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ট্রেন লাইন পুনর্বাসনের পাশাপাশি ছয়টি স্টেশনের মধ্যে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, বড়লেখা ও শাহবাজপুর বি শ্রেণি এবং কাঁঠালতলি ও মুড়াউল স্টেশন ডি শ্রেণিতে পুনসংস্কার করা হবে। এই রেললাইনটি চালু হলে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচটি ট্রেন চলাচল করবে। লোকাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ট্রেনও চলবে এ পথ দিয়ে। কাজ শুরুর পর ২৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

রেলপথটি চালু হলে ২৪টি চা বাগানসহ বৃহত্তর বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য আমদানি ও যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। উদ্ধার হবে রেলওয়ের বেহাত হওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সচল হবে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর রেলস্টেশন।

এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার উদ্ভোধন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট আসবে ভারতের সরকারি খাত ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ থেকে। ২০০ মেগাওয়াট আসবে সে দেশের বেসরকারি খাত ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন’ থেকে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।#

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৮:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত