স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯ | প্রিন্ট
কুলাউড়া উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ মামলা রুজু করায় এবং পুলিশ কর্তৃক ধর্ষিতা ও ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি-ধামকি এবং মানসিক হয়রানী করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বাসিন্দারা। এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ঘটনার প্রধান আসামী আনিছ মিয়া (৩২) কে গ্রেফতার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন মানবন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
(২৮ অক্টোবর) সোমবার সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুস সামাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন ভিকটিমের ভাই, প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি’র সদস্য উমেদ আলী,সহকারী শিক্ষক জামাল আহমদ, সহকারী শিক্ষক হামিদ খান, সহকারী অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম,সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম রাফা, ফাহমিদা ইসলাম শোভা, সফিকুল হাসান প্রমুখ।
মানববন্ধনে ভিকটিমের ভাই উমেদ আলী তার বক্তব্যে বলেন, আমার বোন গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) স্কুলে গিয়েছিলো ছাত্রী হয়ে কিন্তু ফিরেছে ধর্ষিতা হয়ে। বাড়ি ফেরার পথে নরপশু আনিছ ও সানু আমার বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। আমার বোনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো ছুরির আঘাত রয়েছে। ঘটনার পর আমার বোনকে নিয়ে বিকাল ৫ টায় কুলাউড়া থানায় গেলে পুলিশ আমার বোনকে একা একটি রুমে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে রাত ২ টা পর্যন্ত আটকে রেখে তাদের (পুলিশের) মনগড়া ঘটনার বিবরনী আদায় করে। কিন্তু এর আগে আমার বোন প্রথম যে ঘটনার বিবরনী (অভিযোগ) দেয় তা তারা ছিঁড়ে ফেলে।
ভিকটিমের ভাই আরও বলেন, আমার বোনকে তিন পুলিশ ভয় দেখিয়ে বলে- ‘তোমার জেল হবে, তোমার ফাঁসি হবে, তোমার পরিবারের ক্ষতি হবে, তোমার পরিবার ধ্বংস হবে। তাই আমরা যেভাবে বলছি এইভাবে ঘটনা বলো।’
ভিকটিমের ভাই বলেন, আমার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কুলাউড়া থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মামলার মুল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ওই পুলিশদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল তথ্য সবাই পেয়ে যাবেন। আমি আমার বোন ধর্ষণের বিচার চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সেদিন কিভাবে একজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছিলো তা ভিকটিম নিজেই বলেছে। আনিছ ধর্ষণ করার পর সানু যখন ধর্ষণ করেছিলো ঠিক তখন মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে বখাটে আনিছ ও সানু পালিয়ে যায়। ভিকটিম প্রকাশ্যে এরকম জবানবন্দি দেয়ার পরও থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা রুজু করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। যারা ঘটনায় বিচার দাবি করছে তাদেরকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার যখন সুশাসনের পথে ভালো দৃষ্টান্ত রাখতে মরিয়া ঠিক তখনই এরা একটা ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সরকারের নীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা ওইসব রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা করি না। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ভাটেরাবাসী।
ভিকটিমের ভাইয়ের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামী আনিছকে গ্রেফতার এবং ঘটনা ধামাচাপা দিতে যারা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
মানববন্ধন শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ধর্ষণকারীদের ফাঁসি দাবি করে একটি বিক্ষোভ মিছিল ভাটেরা বাজার প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণিতে পড়য়া এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক একটি জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে ভাটেরা ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামের সোনা মিয়া মহরির ছেলে আনিছ মিয়া (৩২) ও ভবানীপুর গ্রামের সোনা মিয়া ওরফে মেলেটারির ছেলে সানু মিয়া (৩৫) নামক দুই লম্পট। এসময় ভিকটিমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওই দুই বখাটে পালিয়ে যায়। পুলিশ সানু মিয়াকে আটক করলেও ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আনিছ মিয়াকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
Posted ৪:০০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.