বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ডিগ্রি কলেজ মাঠে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নামে একটি মাসব্যাপী মেলার আয়োজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বুধবার (১৮ এপ্রিল) উপজেলা প্রশাসন বরাবর মেলার অনুমোদন না দেয়ার জন্য স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন সর্বস্থরের ব্যবসায়ীরা।
স্মারকলিপি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, অকাল বন্যায় বিগত (২০১৭ সাল) বছরে বোরো, আমন এবং আউশ তিনটি ফসল নষ্ট হওয়ায় বাজার অনেকটা ক্রেতা শুন্য ছিলো। প্রায় ১ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়ীদের এই মন্দাভাব থাকে। মন্দাভাব থাকায় শহরের ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করতে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন ্ওবং ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় এবছর বোরো ধানের ফসল ভালো হওয়ায় এবং আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা বিগত বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠার আশা দেখছেন। ব্যবসায়ীদের ধারনা, এবছর ব্যবসার অবস্থা পরিবর্তন হবে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ চিন্তা না করে কতিপয় কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ ও টাকা পকেটস্থ করার লক্ষে সামাজিক সংগঠনের ব্যনারে ডিগ্রি কলেজ মাঠে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন করার চেষ্টা করছে। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ও ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরা জানান, কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষ কতৃূক কিভাবে কলেজ মাঠে মেলার আয়োজনের অনুমতি দেয়া হলো এ বিষয়টি বোধগম্য নয়। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে।
কুলাউড়ার ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ, জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী, জাহের আহমদ চৌধুরী, এম এ জলিল, আব্দুল মোক্তাদির জাহেদ, আবু তাহের আহমদ মামুন, এস আলম সুমন, এজাজ মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল হান্নান, শফিকুল ইসলাম জাহেদ, আমিনুল ইসলাম, সুমন আহমদ, মোসাদ্দিক আহমদ নোমান জানান, বন্যায় বিগত বছরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। বাজারের অবস্থা ছিলো সঙ্কটাপন্ন। ঋণ-ধার করে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী বেতন ও কর দিয়েছি আমরা। এবছর বোরো ফসল ভালো হওয়ায় এবং আসন্ন রমজান মাস, ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আাজহাকে ঘিরে ব্যবসার মন্দাভাব কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা প্রতি বছর ব্যবসা পরিচালনার জন্য ভ্যাট, কর দিয়ে আসছি। অথচ কতিপয় কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিস্বার্থে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারা আরও বলেন, মফস্বল শহরে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি সাধিত হবে। তাই আমরা এই মেলা অনুমোদন না দেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ যদি উপক্ষিত হয় তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে মেলা বন্ধের হুশিয়ারী দেন তারা।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম বলেন, এমনিতেই ব্যবসা মন্দা থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। আসন্ন রমযান ও ঈদের মৌসুমে এই মেলার কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ডিগ্রি কলেজের মাঠে মেলা আয়োজনের অনুমোদনের ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য মোবাইলে বলেন, কলেজের মাঠে মেলা আয়োজনের অনুমোদন কলেজের গভর্ণিং কমিটির সদস্যরা দিয়েছেন।
স্মারকলীপির সত্যতা নিশ্চিত করে এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, সামনে রমযান আসছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, সচেতন মহলের দাবি অনুযায়ী কলেজ মাঠে মেলা শুরু হলে জুয়াসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেলা সম্পর্কে ডিসি অফিস থেকে আমার কাছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা মতামত পাঠাবো। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনা করে আমরা বিহীত ব্যবস্থা নিব।
Posted ৬:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.