স্টাফ রিপোর্টার,সংবাদমেইল২৪.কম | শনিবার, ১৮ মে ২০১৯ | প্রিন্ট
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে এক নারী (৩৫) কে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা ও নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
সোমবার (১৩ মে) উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। নির্যাতিত নারী ওই এলাকার এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী। আর লাঠিপেটাকারী ব্যাক্তি একই ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের মৃত সরল খানের পুত্র মোলাইম খান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই প্রবাসীর স্ত্রী তিন মেয়ের জননী। বড় মেয়ের কিছুদিন আগে বিয়ে হয়। বাড়িতে ওই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। মোলায়েম খান এবং ওই প্রবাসীর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। গত সোমবার দুপুরে প্রবাসীর স্ত্রী স্থানীয় ফুলেরতল বাজার থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’-এর এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আসেন। এসময় ওই নারীর পিছু নিয়ে মোলাইম খাঁ ওই প্রবাসীর বাড়িতে যান। এসময় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে আনেন। পরে ওই নারীর দুই মেয়ের সামনে প্রকাশ্যে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেন। মারধর শেষে মোলাইম খান ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
এদিকে মোলাইম খান ওই নারীকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করছেন ও স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী জানান, ‘আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি মারা গেছেন। ভাশুড় ( স্বামীর বড় ভাই) অন্যত্র থাকেন। আমার স্বামী ওমান প্রবাসী এবং আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকি।’
তিনি আরও জানান, আমার চাচা শ্বশুড়ের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা রয়েছে। মোলাইম খান আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমি তাকে চাচা শ্বশুড়ের সাথে জমি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেই। এই সুযোগে মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন। মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখের কয়েকটি সাদা (লেখাবিহীন) স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নিতে আসেন মোলাইম। কাগজের ব্যাপারে আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে দস্তখত দিতে হবে। আমি সরল বিশ্বাসে সেই সাদা স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর দেই। কিছুদিন পর মোলাইম আমার স্বামীর কাছে মোবাইলের হোয়াটস্অ্যাপে স্বামীকে তালাকের হলফনামা এবং ‘কোর্টম্যারেজের’ কাগজের ছবি পাঠান। আমার স্বামী বিদেশ থেকে ওই হলনামা কাগজের কথা আমাকে জানান। এ বিষয়টি আমি মোলাইমকে জিজ্ঞেস করি। পরে ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখের দুটি স্ট্যাম্প কাগজে সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার দস্তখত নিয়ে (রেজিনং ৭৫৭) কাগজে ‘তালাকনামা’ এবং (রেজি.নং ৭৫৮) কাগজে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হলফনামা দেখিয়ে আমাকে তাঁর স্ত্রী দাবি করে। তখন সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমাকে বিভিন্ন সময় হয়রানী করে ও একদিন আমাকে মারধরও করে।
পরবর্তীতে ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ এবং তালাকনামা বাতিলের জন্য এফিডেভিটের (রেজি নং-৪৮২৪) মাধ্যমে আদালতে আবেদন করি। এরপরও প্রায় সে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকে।
ঘটনার দিন সোমবার দুপুরের মোলাইম বাজার থেকে আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং ঘরে ঢুকে আমার গলায় শ্বাসরোধ করে রাখে। পরে আমাকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে এবং টেনেহিচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে এসে লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করতে থাকে। এসময় আমার মেয়েরা এগিয়ে এলে তাদের উপর চড়াও হয় মোলাইম। মোলাইম খান এসময় আমার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার চেইন নিয়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি।
পরে আমার আত্মীয় স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমার শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় আমি মোলাইম খানকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই, বলেন নির্যাতিত নারী।
এ ব্যাপারে মোলাইম খান বলেন, আমার দুই স্ত্রী আছে এবং ওই নারীও আমার স্ত্রী। আমি তাকে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। আগের স্বামীর সাথে তাঁর তালাক হয়ে গেছে। ঘটনার দিন তাঁর বাড়িতে গেলে প্রথমে সে আমার ওপরে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে মারধর করি।
এ ব্যাপারে ফুলেরতল মসজিদ পঞ্চায়েতের (কমিটির) সাবেক সভাপতি আনারউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানায়নি। আমি পরস্পরের মাধ্যমে মারধরের ঘটনাটি জানতে পেরেছি।
এদিকে এ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী মোনায়েম খাঁনকে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়ারদৌস হাসান নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী এসআই ইয়াছিন মিয়া,এএসআই মোঃ মহিন উদ্দিন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলামের সহযোগীতায় শুক্রবার রাত ১ টার দিকে বরমচাল কলিমাবাদ পাহাড়ী এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।
এব্যাপারে কুলাউড়া থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, নারীর ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন কোনভাবেই কাম্য নয়। মোলাইম খান ওই নারীকে পাশবিকভাবে লাঠিপেটা ও নির্যাতন করেছেন। ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়ারদৌস হাসান শনিবার বিকাল ৩ টার সময় মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এবং শুক্রবার রাত ১ টার দিকে বরমচাল কলিমাবাদ পাহাড়ী এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত মোনায়েম খাঁনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামী মোনায়েমকে শনিবার সকালে মৌলভীবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
Posted ৩:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ মে ২০১৯
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.