বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | রবিবার, ১০ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট
কুলাউড়ায় অপহৃত হিন্দু স্কুল ছাত্রী কাকলী মল্লিক (১৫) এক সপ্তাহেও উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তাঁরা।
অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের দাবিতে (১০জুন) রোববার সকালে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপজেলা কমিটির ব্যানারে কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন চৌমুহনী চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা কমিটি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের লোকজন এবং স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ন্যক্কারজনক এ ঘটনা এলাকাবাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ এখনো স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেনি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অপহরণের দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান আসামির মা ও বোনকে বাড়িতে পেলেও তাঁদের ছেড়ে চলে আসে। ওই দিন তাঁদের ধরে থানায় নিয়ে গেলে অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেত। এখন মামলা হওয়ার পর থেকে ওই পরিবারের সব সদস্য পলাতক।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অরবিন্দ ঘোষের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নির্মাল্য মিত্রের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কুলাউড়া উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোক্তাদীর, মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল কান্তি দেব, হিরণ দেব, কুলাউড়া উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক গৌরা দে, ত্রিশালের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় ভূষণ দাস, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, উপজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু আলী, পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপজেলা কমিটির সহসভাপতি চিকিৎসক অরুণাভ দেব, সদস্য সুজিত দেব, গণমাধ্যমকর্মী খালেদ পারভেজ বখশ প্রমুখ।
মানববন্ধন বক্তব্য দেওয়ার সময় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অরবিন্দ ঘোষ স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যথায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মেয়েটির বাড়ি কুলাউড়া পৌর শহরে। সে স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে পড়ে। রুবেল মিয়া (২৮) নামের এক প্রতিবেশী তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। এ ব্যাপারে মেয়েটির স্বজনেরা রুবেলের পরিবারের সদস্যদের কাছে বিচার চেয়েও ফল পাননি। এ নিয়ে গত ৩১ মে মেয়ের ভাইয়ের সঙ্গে রুবেলের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ১ জুন রাতে রুবেল ও তাঁর ভাই জুয়েলের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন যুবক বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে মেয়েটির ঘরে ঢোকেন। বাড়িতে এ সময় বিদ্যুৎ ছিল না। ঘরে শুধু মেয়েটি ও তার মা ছিলেন। একপর্যায়ে যুবকেরা মেয়েটির মুখে কাপড় গুঁজে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে একটি অটোরিকশায় তুলে চলে যান। এ সময় মা বাধা দিলে তাঁকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বাইরে কাজে থাকা মেয়েটির বাবা-ভাইসহ অন্য স্বজনেরা থানায় ছুটে গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরদিন ২ জুন এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রুবেল, জুয়েল, তাঁদের মা ও বোন এবং একই এলাকার বাসিন্দা আছকর আলীকে আসামি করে মামলা করেন।
জানা গেছে, রুবেলের ভাই জুয়েলের বিরুদ্ধে চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন একজন এসআই ঘটনাস্থলে গেলেও অপহরণের ঘটনায় জুয়েলের মা ও বোন যে জড়িত থাকতে পারেন, সেটা তিনি বুঝতে পারেননি।
Posted ৮:৩৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জুন ২০১৮
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.