এস আলম সুমন, সংবাদমেইল২৪.কম | | | শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
‘আমার যে গান তোমার পরশ পাবে, থাকে কোথায় গহন মনের ভাবে, সুরে সুরে খুঁজি তারে অন্ধকারে, আমার যে আঁখিজল তোমার পায়ে নাবে, থাকে কোথায় গহন মনের ভাবে?’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথে ঠাকুরের গানের কথাগুলোর সাথে হৃদ্যতা জুড়ে যায় তাদের কথা বলতে গেলে। তারা হলেন কুলাউড়ার সংগীতাঙ্গনের দুই প্রিয় মুখ নান্টু দাস ও টুম্পা রাণী দাস। কুলাউড়ায় বিভিন্ন উৎসবে, কনসার্ট-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, বিয়ে-জন্মদিনসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের সংগীত আয়োজনে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত সংগীত শিল্পীদের সাথে তাদের (নান্টু ও টুম্পা ) সমানতালে উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করে। নানান প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে নিজ এলাকা কুলাউড়া ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত সংগীতের মঞ্চে দুজনে কখনো একক কখনো দ্বৈতভাবে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, বাউল-ফোক, রক সংগীতের মূর্ছনায় বিমোহিত করেন র্দশকদের, পাশাপাশি নিজ এলাকার সাংস্কৃতিক অবস্থানকেও তুলে ধরেন তাঁরা। নান্টু দাস ও টুম্পা রাণী দাসের বাড়ি উপজেলার জয়চ-ী ইউনিয়নের পুষাইনগর গ্রামে। দু’জনে সম্পর্কে কাকা-ভাতিজি। নান্টু দাস বর্তমানে উপজেলা উদীচীর সহ সাধারণ সম্পাদক ও রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ের সমন্বয়কারী এবং টুম্পা ওই সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা ও রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও তারা ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার সিলেটের তালিকাভুক্ত শিল্পী। এক সময়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ঐতিহ্যবাহী কুলাউড়ার বর্তমান সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যখন অনেকটাই শূন্যতা সৃষ্টি পরিলক্ষিত হয় তখন নিজেদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে এই দু’জন সেই শূন্যতাকে ঘোচানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলস।
নান্টু দাস বলেন, ২০০৪ সালে রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ে সংগীত গুরু ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্যের কাছে লোকগীতির গান শিখি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় ও এককভাবে গান শুরু করি। ২০০৭ সালে বিভিন্ন কনসার্ট এবং স্টেজ প্রোগ্রামে গান গাইতে শুরু করি। এরপর থেকে কখনো এককভাবে আবার কখনো দু’জন (টুম্পাকে নিয়ে) কুলাউড়া ছাড়াও সিলেট, হবিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জুড়ী শ্রীমঙ্গলসহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় আয়োজিত কনসার্টে আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি। তিনি আরও বলেন, এই গান শেখার জন্য আমাকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই গান শেখার বিষয়টি আমার পরিবারও সহজভাবে মেনে নেয়নি। সংগীতের প্রতি ভালোবাসা ও আমার সংগীত গুরু ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্যের সহযোগিতায় আমি গান শিখতে পেরেছি। স্টেজ প্রোগ্রামের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছি। এছাড়াও চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বেও অংশ নিয়েছি। টুম্পা রাণী দাস বলেন, ২০০০ সালে গান শিখার জন্য রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এরপর শিশু শিল্পী হিসেবে স্থানীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক, নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীতে এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মৌলভীবাজার জেলা, জাতীয় ধ্রুব পরিষদ, সিলেট ললিতকলা একাডেমী ও নুপুর সংগীতালয় (সিলেট) এর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। বর্তমানে উপজেলা উদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বৈশাখী উৎসবসহ বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত স্টেজ প্রোগ্রামে কাকু (নান্টু) ও আমি পারফরমেন্স করে থাকি। ভালো লাগে বিভিন্ন কনসার্টে গুণী ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের উপস্থিতিতে মঞ্চে যখন গান গাই।
নান্টু ও টুম্পা বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা আমাদের আমন্ত্রণ জানান এবং একই সাথে ইন্সট্রুমেন্ট ও মিউজিশিয়ান ব্যবস্থা করে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু কুলাউড়ায় সেই মানের ইন্সট্রুমেন্ট ও মিউজিশিয়ান না থাকায় সিলেট অথবা মৌলভীবাজার থেকে ভাড়া করে আনতে হয়। এছাড়াও বলেন অনেক ঘরোয়া ও ছোট অনুষ্ঠানে তাদেরকে আমন্ত্রণের পাশাপাশি সিলেট অথবা মৌলভীবাজার থেকেও সংগীত শিল্পীদের আনা হয়। কিন্তু আগত অনেক অতিথি শিল্পী একই মানের হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু অনুষ্ঠানে সেসব শিল্পীদের গুরুত্ব দেয়া এবং তাদেরকে মূল্যায়ন না করার ঘটনা খুব কষ্টদায়ক। তবুও গানের মাধ্যমে কুলাউড়ার সংস্কৃতিক অঙ্গনকে তুলে ধরার প্রয়াস অব্যাহত রাখবো বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।#
Posted ১০:১০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.