মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

কুলাউড়ার ব্রাহ্মনবাজারে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি,সংবাদমেইল২৪.কম | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট  

কুলাউড়ার ব্রাহ্মনবাজারে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা

কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের লোয়াইউনী চা বাগানে গরু জবাইকে কেন্দ্র করে চা শ্রমিক জনগোষ্টি মুসলাম ও হিন্দুরমধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় একটি পক্ষ তিল কে তাল বানিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের উপর ভিত্তিহীন তকমা দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়ীক অশান্তি তৈরি করতে চায় তারা। যদিও পুলিশি তৎপরতায় বিষয়টি বেশি দুর এগোতে পারেনি।

চা শ্রমিক নেতারা বলছেন মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যেকার সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি পক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের লোয়াইউনি চা বাগানের মসজিদের ইমাম মো. সৈয়দ আহমদ চৌধুরীর অসুস্থ একটি গরু একাই জবাই করেন। এতে চা বাগানে হিন্দু শ্রমিকদে মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় তাৎক্ষনিক বাগান ব্যবস্থাপক মাহমুদ আলী, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মমদুদ হোসেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য সত্য নারায়ন নাইডু ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি বৈঠকে বসে। মসজিদটি চা বাগান মালিক পক্ষের হিসেবে বিষয়টি বাগান মালিক পক্ষ দেখবে বলে আশ্বস্ত করলে চা শ্রমিকরা কাজে ফিরে। পরে অসুস্থ গরু না খেয়ে মাটি চাপার সিদ্ধান্ত দেন চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাহমুদ আলী। সে সময় গরু জবাই কারী মসজিদের ইমাম বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে মুসলমান চা শ্রমিক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সামছু মিয়ার উপস্থিতিতে গরুটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।

এদিকে ঘটনার দু’দিন পর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান মমদুদ হোসনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে একটি পক্ষ মিছিল করছে বলে জানা গেছে। চা বাগানের মুসলমান চা শ্রমিকের ভাষ্যমতে অভিযোগ সঠিক নয়। গুজব রটানো হয় ‘গরু জবাইয়ের কারণে হিন্দুদের কাছে ইমামকে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে এবং জবাইকৃত গরু মাটিচাপা দিতে বলেছেন চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন।’ এ গুজবে সাড়া দিয়ে কিছু অতি উৎসাহী যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে মিছিল করে।


এ প্রসঙ্গে লোয়াইউনী চা বাগান পাঞ্চায়েতের সভাপতি অজিৎ কৌরি বলেন- ‘ক্ষমা
চাওয়ার কোন ঘটনাই সেখানে ঘটেনি। আমাদের বৈঠকে ইমাম সাহেব ছিলেননা। আমাদের চা শ্রমিকদের মাঝে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নেই। কে বা কারা মিথ্যা বানোয়াট গুজব রটিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। এ চা শ্রমিক নেতা অপপ্রচারের বিচার প্রার্থী হন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সত্য নারায়ন নাইডু জানান-‘অসুস্থ গরু জবাই করা হয়েছে বিদায় সেটা মাটিচাপা দিতে চা বাগানের ব্যবস্থাপক সিদ্ধান্ত দেন। বৈঠকে মসজিদের ইমাম ছিলেন না, তাহলে ক্ষমা চাইবেন কি করে? চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেনের সাথে ইমামের দেখাই হয়নি।’


মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সমছু মিয়া বলেন- ‘ক্ষমা চাওয়ার বিষয় হলে আমরাই আগে প্রতিবাদ করতাম। হিন্দুদের কাছে আমাদের ইমামকে ক্ষমা চাইতে দিতাম না। ঘটনার দিন হিন্দুদের কাছে আমাদের ইমামের ক্ষমা চাওয়ার কোন ঘটনাই ঘটেনি। আমরা নির্দিষ্ট একটি স্থানে অনেক দিন হল গরু জবাই করছি। কোন হিন্দু আমাদের সমস্যা করছে না। আমাদের মাঝে কোন দন্দ্ব নেই।’

চা বাগান মসজিদের ইমাম সৈয়দ আহমদ চৌধুরী বলেন-‘আমায় ক্ষমা চাইতে কেউ বলেননি, আমি সে বৈঠকেও আসিনি। চেয়ারম্যানের সাথে আমার দেখা হয়নি। আমার গরুর খাদ্যের রুচি বাড়াতে খাবারের শুটকি খাওয়াচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে শুটকি না খেয়ে ফেলে দেয়। আবারও খাওয়াতে চাইলে গুরুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এসময় বটি দা নিয়ে গরুটি জবাই করি। পরে অন্তু নামের একজন আমায় মারতে আসে। পরিস্থিতি উত্তেজনা দেখে সমছু মিয়ার দোকানে চলে যাই।’ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এ ইমাম বলেন-‘বৈঠকে আমি ছিলাম না। অফিসে বৈঠক হয়েছে শুনেছি। জবাইকৃত গরুটি অসুস্থ থাকায় বৈঠকে তা মাটিচাপা দিতে সিদ্ধান্ত হয়। পরে মুসলিম চা শ্রমিকরা গরু মাটিচাপা দেয়। ক্ষমাও চাইনি,চেয়ারম্যানের সাথে দেখাও হয়নি।’

এ ব্যাপারে চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাহমুদ আলীর মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া
যায়।

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মমদুদ হাসেন বলেন-‘বাগানের মুসলমান হিন্দুদের মধ্যে কোন সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব নেই। গরু জবাইকে কেন্দ্র করে আমায় জড়িয়ে একটি পক্ষ গুজব ছড়াচ্ছে। গরু জাবাইকারী ইমামের সাথে আমার কোন দেখাই হয়নি সেইদিন। এখানে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ আসে কি করে? আসলে আমাকে প্রতিহিংসার বসত একটি গ্রুপ সবসময় আমার লেগে আছে।

কুলাউড়া থানার তদন্ত অফিসার সঞ্চয় চক্রবর্তী জানান-‘এটা ঠিক গরুনা, এটা কে বাছুর বলতে হবে। বয়স মাত্র দেড় বছর। বাছুরটির শরীর স্বাস্থ্য বাড়াতে মসজিদের ইমাম শুটকি খাইয়েছিলেন। এক পর্যায়ে বাছুর অসুস্থ হয়ে পড়লেই ইমাম একাই জবাই করেন। এ নিয়ে অন্তু নামের এক চা শ্রমিক হাল্লা-চিৎকার করে। পরে বেঠক হয় ম্যানাজারের অফিসে।

এক প্রশ্নের উত্তরে এ পুলিশ কর্তকর্তা বলেন-‘প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে চেয়ারম্যানের সাথে মসজিদের ইমামের দেখা হয়নি। যা মসজিদের ইমাম আমাদের কাছে নিজে বলেছেন। চেয়ানম্যানকে জড়িয়ে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। ক্ষমা চাওয়ার কোন সত্যতা আমরা পাইনি

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১০:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত