শাহ আলম শামীম,সংবাদমেইল২৪.কম | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০১৭ | প্রিন্ট
সরকারি ভিজিএফের চাল কেলেঙ্কারির ঘটনায় কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের নারী চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনকে প্রকাশ্যে নির্দেশ দিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল।
আজ (৪ জুলাই) মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া উপজেলায় একটি ত্রাণ বিরতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ নির্দেশ দেন। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ্ জালালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ। দুঃস্থদের ভাগ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে তাদের রেহাই নেই। কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। কুলাউড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। সভাস্থলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলী বিজিএফের চাল দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কানে আসলে কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদকে দিয়ে সদর ইউনিয়নের রাঙ্গিছড়া চা বাগানের বাজারে অভিযান চালান।
এ সময় বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহরকৃত ব্যবসায়ী নাইডর দোকান থেকে ৭ বস্তা ও গ্রাম পুলিশ ইউনিয়নের চৌকিদার মালিক মিলনের দোকান থেকে বস্তাসহ মোট ১০ বস্তা সরকারি চাল এবং ১৩টি খালি বস্তা উদ্ধার করে। এসময় ইউপি সদস্য জমির আলী ও দোকান মালিক নাইডুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেও ঈদের দিন ভোরে তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে ঘটনার চার দিন পর (২৯ জুন) চাল বিক্রয়ের অভিযোগে চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৪ জনর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শিমুল আলী।
ওইদিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার তালিকাভুক্ত আসামি ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার জমির আলী, ইউনিয়নের চৌকিদার ও দোকান মালিক মিলন ও অপর দোকান মালিক সন্ন্যাসী নাইড়ুকে আটক করে পুলিশ।
পরে পুলিশের পক্ষ থেকে ইউপি সদস্যসহ তিন জনরে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে বিজ্ঞ বিচারক ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত অফিসার কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদ।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলিকে প্রধান আসামি করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ঘটনার মূলহোতা চেয়ারম্যানের স্বামী ও তার (চেরম্যানে বুবলির স্বামী) সকল কর্মকান্ডের মূল হোতা সাবেক বিতর্কিত চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনার মূল হোতা বর্তমান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের স্বামী মো. শাহাজানকে মামলার আসামি করা হয়নি।
ইউনিয়নবাসী পক্ষ থেকে আমরা অভিযোগ দেওয়ার পরও চেয়ারম্যানের স্বামী মো. শাহাজানকে মামলার আসামি না করায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কারণ নার্গিস আক্তার বুবলী চেয়ারম্যান হলেও সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন তার স্বামী মো. শাহাজান। এমনকি চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে সকল কর্মকন্ড পরিচালনা করেন। তার বিরুদ্ধে সরকারের প্রদত্ত অনান্য বরাদ্দের সিংহভাগ লোটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
এমন অনিয়মের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলীর ফোনে কল দিলে রিসিভ করেন উনার স্বামী ( সাবেক চেয়ারম্যান) শাহাজান। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে এ সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব একটি বডি আছে। কোনো অনিয়ম হলে দায় তাদের আমার না।
চেয়ারম্যান না হয়েও চেয়ারে কেন বসেন এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি জানান, চেয়াম্যানের চেয়ারে অন্য কেউ বসতে পারে না। বর্তমান চেয়ারম্যান আমার স্ত্রী, আমি সাবেক চেয়ারম্যান। উনার সাথে আমার সম্পর্কে শুধুই স্বামী-স্ত্রী। যে দিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি, সে দিন থেকে আমার দায় শেষ। চেয়ারে বসার প্রশ্নই আসে না।
বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলে সাবেক এ চেয়ারম্যান বনে, তিনি ফোন ব্যবহার থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন।
সংবাদমেইল২৪.কম/এসএএস/এনআই
Posted ৫:১০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০১৭
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.