মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

একমেবাদ্বিতীয়ম শেখ হাসিনা

এম এম শাহীন: | রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট  

একমেবাদ্বিতীয়ম শেখ হাসিনা

এই বিশ্বভ্রহ্মান্ডে হাতে গোনা কিছু মানুষ নিজ কর্মের গুণে অমরত্ব লাভ করেন। ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের মাধ্যমে তারা জয় করে নেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, মানবতা, ন্যায়পরায়ণতা সর্বোপরি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর কিছু মহৎ কর্ম করেন, যা তাকে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়। যুগে যুগে এ ধরনের মানুষের দেখা মেলে, যারা যেখানে হাত দেন সেখানেই মেলে মুক্তা। তাদের হাতের পরশে ধু ধু মরুর বুক যেমন সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা হয়, তেমনি গভীর সমুদ্রের বুক চিড়েও উঠে আসে সোনার পাহাড়।

শতাব্দীর মহাকাল পেরিয়েও তারা বেঁচে থাকেন মানুষের মনের মণিকোঠায়। তাদেরই একজন বাংলাদেশের চারবারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। যোগ্য বাবার যোগ্য কন্যা। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান কান্ডারি। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির যত বড় বড় অর্জন এর অধিকাংশই হয় তাঁর পিতার সুযোগ্য নেতৃত্বে আর এসবের পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে তাঁর হাত ধরেই। শেখ হাসিনা এমন কিছু দৃষ্টান্তমূলক ও ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন ও করে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা আর কোনো রাষ্ট্রনায়ক করতে সক্ষম হননি। ব্যতিক্রম আর দৃষ্টান্ত স্থাপনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যেন একমেবাদ্বিতীয়ম।


রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি একদিকে যেমন দৃঢ়চেতা অন্যদিকে তেমনি মমতাময়ী। সরকার পরিচালনার সুকঠিন কাজটি যেমন দূরদর্শিতার সঙ্গে সম্পন্ন করছেন, তেমনি দল পরিচালনায়ও সমান দক্ষ। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি দলের লাগাম ছেড়ে দেননি। সরকার ও দলকে গুলিয়ে ফেলেননি। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি যতটা কোমল ও মমতাময়ী, তেমনি দল ও দেশের ইমেজ ক্ষুণ্নকারী নেতা-কর্মীদের প্রতি ঠিক ততটাই কঠোর। ‘শাসন করা তারেই সাজে সোহাগ করে যে’- তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দলের বাইরেও তিনি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অভিভাবক। ভরসার ঠিকানা।

সাহিত্যিক-লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ সবাই তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের প্রতিটি পেশার লোককে যথাযথ মর্যাদা দিতে শেখ হাসিনার জুড়ি মেলা ভার। খেলাধুলা ও সঙ্গীতে সমঝদার প্রধানমন্ত্রী এসবের পৃষ্ঠপোষকতা করেন নিয়মিত। সাহিত্য নিয়েও শেখ হাসিনার আগ্রহ প্রবল। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে তিনি সর্বদাই লেখক ও সাহিত্যিকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে যাচ্ছেন। গুণীর কদর দিতে তিনি কখনো কার্পণ্য করেন না। দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক-লেখকদের প্রতি বরাবরই তিনি শ্রদ্ধাশীল।


নিজের নাতি-নাতনিরা যেমন তাকে ভালোবাসে, তেমনি ভালোবাসে দেশের কোটি কোটি শিশু। শিশুদের ক্ষেত্রে তাঁর হৃদয় বরাবরই কুসুমকোমল। শুধু রাষ্ট্র ও দল পরিচালনাতেই নন, ঘর-সংসার পরিচালনায়ও তিনি সমান পারদর্শী। একজন মমতাময়ী মা, পাশাপাশি ভালো রন্ধনশিল্পী।

রাষ্ট্র, দল, সমাজ, সংসারের বিরাট ধকল কাটিয়ে সুযোগ পেলেই প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন আমজনতার একজন। খেলার মাঠে উপস্থিত হয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়া, বিজয়ী দলকে সঙ্গে সঙ্গে ফোনে অভিনন্দন জানানো, কোনো গানের আসরে শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলানো, রিকশা কিংবা ভ্যান গাড়িতে চড়া, সমুদ্রসৈকতে নেমে পা ভেজানো, তুষার দেখতে যাওয়া, ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর মতো চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক কর্মকা- ইতিপূর্বে বাংলাদেশের আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এসবই শেখ হাসিনার বিশেষত্ব। লোক দেখানো নয়, অন্তরগত বিশেষত্ব।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ব্যতিক্রমী কর্মকান্ডের অজস উদাহরণ রয়েছে, যা এই ছোট্ট পরিসরে লিখে শেষ করার নয়। তবু উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার বর্ণনা করছি, যা আমাকে যুগপৎ বিস্মিত ও চমৎকৃত করেছে এবং এ লেখায় উৎসাহী করে তুলেছে।

১৯৯১ সাল। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। প্রবাসে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র প্রিয় মুখপত্র ‘ঠিকানা’ পত্রিকাকে আরো পাঠকপ্রিয় ও সমৃদ্ধ করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। এমনই মাহেন্দ্রক্ষণে নিউইয়র্ক সফরে এলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উঠলেন ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্ক সংলগ্ন বিখ্যাত ওয়েস্টিন হোটেলে। ঠিকানার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিতে আমি আগ্রহী হয়ে উঠলাম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি নুরুল ইসলাম অনু (প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের কাছে আমার আগ্রহের বিষয়টি জানালাম। তারা নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাকে দিন-তারিখ দিলেন। সাক্ষাতের সময়টা ছিল নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা।

যথাসময়ে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। বিকেল ৪টা পেরিয়ে প্রায় সাড়ে ৪টা হয়ে গেছে। আমি অপেক্ষা করছি, ঠিক তখনই পাশের রুম থেকে শাড়ি পরিহিতা সদা হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা এলেন। পরে জানতে পারলাম, আছরের নামাজ পড়ার কারণে তাঁর আসতে একটু দেরি হয়েছে। এত ব্যস্ততা এবং সফরের মধ্যেও ধর্মকর্মের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ দেখে আমি একই সঙ্গে অভিভূত ও শ্রদ্ধাবনত হয়ে পড়ি। আমি ঠিকানার পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে দেশ ও প্রবাসের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলি। তিনি আমার প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ জবাব দেন।

সাক্ষাৎপর্ব শেষে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশান্তচিত্তে বিদায় নিতে চাইলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে যাবেন বলে একসঙ্গেই লিফটে নামলেন। হোটেলের সামনে এসে তিনি আধো আলো আধো অন্ধকারে অনেক দূরে লক্ষ করলেন কী যেন ঝলমল করছে, যা অনেক দূর থেকেও মানুষের নজর কাড়ছে। এ সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শাহীন, দূরে কিসের আলোকোজ্জ্বল ওই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে?’ আমি বললাম, ‘এটা ওয়াশিংটন ব্রিজ। ব্রিজটির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একে এমন নয়নাভিরাম করে সাজানো হয়েছে।’ জবাবে তিনি বললেন, ‘এ দেশে ব্রিজেরও কি জন্মদিন উদযাপন করা হয়?’ তাৎক্ষণিক তিনি সেখানে অবস্থিত স্ট্যাচু, পার্কসহ চোখজুড়ানো কয়েকটি স্থাপনার সামনে ছবি তোলার আগ্রহ ব্যক্ত করলে আমি তাঁর বেশ কিছু ছবি তুলে দিই। এরপর আমরা যার যার গন্তব্যে চলে যাই। পরবর্তীতে তিনি যতবারই নিউইয়র্ক বা ফ্লোরিডায় গিয়েছেন, প্রায়ই ফোন করে অথবা তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে ঠিকানা ও এর সাংবাদিকদের কুশলাদি জানতে চেয়েছেন।

প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসেন শেখ হাসিনা। সে সময়ে পড়ল তাঁর জন্মদিন। ঠিকানা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিল তাঁর জন্মদিন উদযাপনের। বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলে তিনি সাদরে তা গ্রহণ করেন। ঠিকানা অফিস সংলগ্ন ইস্ট রিভার রেস্তোরাঁয় প্রবাসের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীর কাছেও শেখ হাসিনা এক ভরসার নাম, আস্থার প্রতীক। অধিকাংশ শ্রেণি-পেশার মানুষের বিশ্বাস, যেকোনো বিষয়ে সঙ্কট যত গভীরই হোক না কেন, শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করলে সেটা নিমেষেই সমাধান হয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস যে অমূলক নয়, তার প্রমাণও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শাসনামলে যখনই রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা দলীয় যেকোনো ইস্যুতে পাহাড়সম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও দলীয় মন্ত্রী-এমপিরা যখন সমস্যার সমাধানে গলদঘর্ম হচ্ছেন, ঠিক তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন স্বয়ং নেত্রী। তাঁর অপার বুদ্ধিমত্তা ও নিপুণ দক্ষতায় মুহূর্তের মধ্যেই সেই সমস্যার সঠিক সমাধান বেরিয়ে এসেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, জঙ্গি উত্থানসহ বিভিন্ন বড় বড় ইস্যুতে বিশেষজ্ঞরা যখন সরকারের বিপদ আঁচ করতে পাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই শেখ হাসিনার একটি ভাষণ কিংবা বিবৃতিতেই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি পুরোপুরি বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে।

অবাক করার ব্যাপার হলো, জাতীয় প্রেসক্লাবে বা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ, অবস্থান ধর্মঘট কিংবা আমরণ অনশনের ডাক দেন, সেসব কর্মসূচিতে প্রদর্শন করা ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে তাদের দাবি দাওয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনার ছবিও শোভা পায়। এসব আন্দোলন মূলত সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই। যার বিরুদ্ধে আন্দোলন তার ছবি সম্মানের সঙ্গে প্রদর্শন করার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। অতীতে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীরা সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে আর তার কুশপুত্তলিকা পোড়াচ্ছে। কিন্তু কেবল শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। অর্থাৎ আন্দোলনকারীদেরও বিশ্বাস, একমাত্র শেখ হাসিনাই তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তাদের বিশ্বাস বিফলে যায়নি, প্রধানমন্ত্রী সকল ক্ষেত্রেই তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।

আবার মমত্ববোধের দিক দিয়েও সবাইকে ছাড়িয়ে শেখ হাসিনা। ২০১০ সালে ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকা- ট্র্যাজেডিতে হঠাৎ স্বজন ও সম্পদ হারিয়ে তিন কিশোরী রুনা, রতœা ও শান্তার কোমল হৃদয়ে যখন জ্বলছে তুষের আগুন, ঠিক তখন জননীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন প্রধানমন্ত্রীই। অচেনা কিশোরী তিনটির কেবল দায়িত্বই নিলেন না, একজন মমতাময়ী মায়ের স্নেহ দিয়ে তাদের হৃদয়ের হাহাকার দূর করলেন, নিজে অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে তাদের বিয়ে দিয়ে রচনা করলেন নতুন রূপকথা। অতল সাগরে হাবুডুবু খাওয়া নিঃস্ব ওই তিন কন্যা মুহূর্তেই হয়ে গেল রাজরানী। প্রধানমন্ত্রীর এই মহত্ত্বের কথা আজো মানুষ ভোলেনি।

শেখ হাসিনা এ যাবৎকালের বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সরকারপ্রধান। কোনো প্রধানমন্ত্রী সৎ ও আন্তরিক থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় তার প্রমাণ শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে আমরা সমুদ্র জয় করেছি, এসেছে আকাশ জয়, হয়েছে ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে আমাদের নিজস্ব খরচে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে, যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, উল্লেখযোগ্য হারে ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে এখন যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। পোশাক ও ওষুধশিল্পে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিদেশে রফতানি হচ্ছে এবং বিশ্বের ৩ নম্বর ওষুধ রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক বিদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। বাংলাদেশ আজ সারা পৃথিবীর কাছে উন্নয়নের রোলমডেল। কৃষিতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সফল। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী ২৭টি বিমানের ১০টিই যুক্ত হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলের বিগত ১০ বছরে। এসব অর্জনের পেছনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশেষভাবে স্বীকার করতেই হবে।

শেখ হাসিনা কেবল দেশবাসীর স্বার্থই দেখছেন না, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিও তাঁর মমত্ববোধ সমান। রেমিট্যান্সের মহান কারিগরদের জন্য ইতিমধ্যে তিনি ভোটার স্মার্টকার্ড, প্রবাসীদের ব্যাংকের অনুমোদন, বিমানবন্দরে হয়রানি হ্রাস, রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যয় হ্রাস, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিট্যান্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ প্রবাসীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা দুর্মুখেরাও স্বীকার করতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রীর এসব অবদানের প্রতিদানও দিচ্ছেন প্রবাসীরা। শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো নয়, দেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, উদার হস্তে সাহায্য করছেন। বাংলাদেশের যেকোনো উদ্বেগজনক খবরে প্রবাসীরা যেমন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠেন, বিপরীতে ছোট্ট একটি ভালো খবরেও আনন্দে নেচে ওঠেন। তাই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে ঈর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে দিতে প্রবাসীরা যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রবাসীদের এই দেশপ্রেম দিনকে দিন বাড়ার পেছনেও অনুপ্রেরণাদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনিই। দেশবাসীর পাশাপাশি প্রবাসীদের কাছেও নিজেকে জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

তাই আমি মনে করি, দেশের প্রতি প্রবাসীদের ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের ১০টি আসন ১০-১৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি স্বদেশে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালু, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি পূর্ণাঙ্গ শাখা চালু করাও অতীব জরুরি। আমার বিশ্বাস, প্রবাসীবান্ধব বর্তমান সরকার এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে অচিরেই এসব কাজ সম্পন্ন করবে। গত দুই-আড়াই দশক আগেও যে দেশকে বিশ্ববাসী চিনত ভুখা-নাঙ্গা, সাইক্লোন-ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত দারিদ্র্যপীড়িত এক দেশ হিসেবে, আজ সেই বাংলাদেশের গ্রাম-শহরে সর্বত্র অভাবনীয় পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে। না, কোনো আলাদিনের প্রদীপ এসে এ দেশের চেহারা বদলে দিয়ে যায়নি, এই বদলের রূপকার একজন মানুষই-তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এর সামনে-পেছনে চালিকাশক্তি কেবল শেখ হাসিনাই। বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য যে এ দেশের মানুষ শেখ হাসিনার মতো ভিশনারি, কর্মঠ ও প্রচ- সৎ এক বিরল নেতা পেয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের বা উন্নয়নশীল দেশে একজন নেতা দেশকে কীভাবে দ্রুত এগিয়ে নিতে পারেন, তা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

দেশ একটি প্যাকেজ। যে দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান ওই প্যাকেজকে যতটা বিজ্ঞানসম্মত, সময়োপযোগী ও মোহনীয় রূপে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করতে পারেন, সেই দেশ তত দ্রুত বিশ্বের দরবারে নিজের জায়গা করে নেয়। তাই যে কোনো দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে হলে দরকার যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই লক্ষ্যপানেই এগিয়ে চলেছে।

লেখক: সাবেক এমপি ও সম্পাদকম-লীর সভাপতি, ঠিকানা গ্রুপ অব মিডিয়া

Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত