মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০

উঠে এসেছি খাদের কিনারা থেকে

আব্দুল বাছিত বাচ্চু :- | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯ | প্রিন্ট  

উঠে এসেছি খাদের কিনারা থেকে

জমিজমা অনেক ছিলো। ৮ ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও কাজের লোক মিলে প্রতিদিন ১২/১৩ জনের খাবারসহ সংসার আর সন্তানদের পড়ার খরচ যোগাতে গিয়ে জমিজমা ৯০ শতাংশই বিক্রি করে দেন। পরিবারে আয় বাড়াতে জমি বিক্রি করে বড়ভাইকে বিদেশে পাঠালেও দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন নিখোঁজ ।

সেই অবস্থায় ১৯৮৫ সালে আব্বার আকস্মিক মৃত্যুর পর আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি ভাগ্যান্বেষনে । বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। কিন্তু পত্রিকা জগতে ছিলাম একধরনের নেশাখোর পাঠক। ইত্তেফাক সাধু ভাষার আর সংবাদ ছিলো চলিত ভাষার দৈনিক কাগজ। পত্রিকা দুটি না পড়লে যেনো পেটের ভাত হজম হতো না। কিন্তু কিনে পড়ার সামর্থ্য নেই। একদিন কাজের ফাকে ক্রেতা/ভোক্তার একটি পত্রিকা নিয়ে পড়া শুরু করি। প্রতিষ্ঠান মালিকের এক আত্মীয় সম্ভবত সেটা সহ্য করতে না পেরে বড় একটা গালি দিলেন। আমি নাকি মুর্খ অশিক্ষিত আবার পত্রিকা পড়তে মন চায়। সেরাতে ঘুমাতে পারছিলাম না। গভীর রাতে সিদ্ধান্ত নেই আবার পড়াশোনা করবো। বাড়িতে এসে পড়াশোনা করার ইচ্ছার কথা জানালেও কেউ দায়িত্ব নেয়নি।আর নিবেই বা কে এতো বিরতির পর। ফিরে গিয়ে অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজের ফাকে পড়াশোনা শুরু করি। আমি নবম শ্রেণী থেকে পড়া বাদ দিয়েছিলাম। বইপত্র দেখে মনে হলো ওই বছরই এসএসসি দিতে পারবো। সিলেট পাইলট স্কুল থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করি।


প্রয়োজনীয় কাগজ দিয়ে সাহায্য করলেন বড়ভাই (চাচাতো) শিক্ষক আমিনুর রহমান রেনু ভাই, নয়াবাজার কে সি হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক রতিশ বাবু স্যার আর সিনিয়র শিক্ষক খলিল স্যার। ১৫ দিন পর বোর্ডিং য়ে থেকে টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে পাস করি। চলে যাই বিশ্বনাথ থানার খাজান্সিবাড়ি ইউনিয়নে। এক প্রবাসী পরিবারে বাচ্চাদের পড়িয়ে পরে নিজে পড়তে হতো। তিনমাস নিজে নিজে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেই। শুরু হলো বহু প্রতিক্ষিত এসএসসি পরীক্ষা। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় ছাতক থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী লোকাল ট্রেনে খাজানশি থেকে সিলেট শিবগঞ্জ সৈয়দ হাতিম আলী স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। ট্রেন থেকে নেমে কিছু পায়ে হেটে আবার কিছু বেবী ট্যাক্সি ডেকে যেতাম। অনেকদিন চা আর গ্রামীন নিম্নমানের ২ পিস বিস্কুট মুখে দিয়েও পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছি। আর বাসস্থানে ফিরে যেতাম সুনামগঞ্জগামী বাসে জালালাবাদ এলাকায় নেমে সুরমা পাড়ি দিয়ে বাকি তিন মাইল পায়ে হেটে। দূরের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেক বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয়েছে। গনিত পরীক্ষার দিন প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়লে ভিজে জবুথুবু। হাত চলছিলো না। লিখতে পেরেছি ১১ টার পর। অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা গরম কাপড় নিয়ে আসলেও আমার তো আর সেখানে কেউ ছিলো না।

৯৩ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল সম্ভবত প্রকাশিত হয়েছিল জুলাই মাসের শেষ বা আগস্ট মাসের প্রথমদিকে। মোবাইল ফোন ছিলো না। পরেরদিন শমসেরনগর বাজার থেকে ইত্তেফাক পত্রিকা এনে জানলাম আমি প্রথম বিভাগে পাশ করেছি। এখন যেভাবে জিপিএ ৫ আসে তখন এরচেয়ে কম শিক্ষার্থী প্রথম বিভাগে পাশ করতো। পরে মার্ক শিট এনে দেখলাম রোল নম্বর প্রাঃ ৭৯২২২ থাকায় মনে হয় অনেক বিষয়ে ৭৭ নম্বর পেয়েছি। কিন্তু ৩ মার্কের জন্য লেটার মার্ক ভাগ্যে জোটেনি।


প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা থেকেই এমনটি হতো বলে শুনেছি। পরে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তির মধ্য দিয়ে আবার রেগুলার শিক্ষা জীবন শুরু করি। জীবন সংগ্রামে আছে আরো অনেক উত্থান পতনের কাহিনী। (চলবে)

লেখক:- সাংবাদিক ।
সাবেক সভাপতি, প্রেসক্লাব কুলাউড়া।
চেয়ারম্যান, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ।


Facebook Comments Box

Comments

comments

advertisement

Posted ৪:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০১৯

সংবাদমেইল |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মানজুরুল হক

নির্বাহী সম্পাদক: মো. নাজমুল ইসলাম

বার্তা সম্পাদক : শরিফ আহমেদ

কার্যালয়
উপজেলা রোড, কুলাউড়া, মেলভীবাজার।
মোবাইল: ০১৭১৩৮০৫৭১৯
ই-মেইল: sangbadmail2021@gmail.com

sangbadmail@2016 কপিরাইটের সকল স্বত্ব সংরক্ষিত