জসীম চৌধুরী/ মাহফুজ শাকিল,সংবাদমেইল২৪.কম: | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশের জন্য যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান আতা হলেন অন্যতম।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং উপজেলার প্রাক্তণ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। একটা সময় মানুষের জন্য নিজের পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেননি। দেশ এবং নিজ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুলাউড়া উপজেলা শাখার জন্য নিবেদতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়া সত্ত্বেও আজ তার পাশে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কেউ নেই। নিজ বাসভবনে একাকীত্বে ভোগা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার আফসোস সারা জীবন মানুষ আর নিজের দল আওয়ামীলীগকে নিয়ে ভাবলেন। অনেক সুযোগ- সুবিধা হাতের নাগালের কাছে পেয়েও লোভ লালসা করেননি। দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতার মোহে বড় বড় নেতারা হয়তো ভূলে গেছেন দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই নেতার কথা। খোদ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মতিন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেণুসহ দলের শীর্ষস্থানীয় কোন নেতা রাখছেন না তাঁর খোজ।
বিশেষ করে তিনি যাদের সাথে রণাঙ্গণে অংশ নিয়েছেন সেই সময়কার কোন সহকর্মীও তাঁকে এখন আর দেখতে আসেন না। মুক্তিযোদ্ধা আতা এখন প্রতিটি মুহুর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। মুক্তিযোদ্ধা আতাকে প্রথমে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হার্টে সমস্যা ধরা পরে। এরপর ঢাকা আর্মড মেডিকেল ফোর্স কলেজে হার্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো হয়। পরবর্তীতে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডাঃ আবু সাঈদ আব্দুল্লাহ মুকুলের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ প্রখ্যাত নিউরো বিশেষজ্ঞ, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমানের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
ডাক্তার জানিয়েছেন, তাঁর চিকিৎসাটা অনেক ব্যয়বহুল। দেশে এর কোন চিকিৎসা নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে। এদিকে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান আতা ২০১৩ ও ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে মানবিক সাহায্যের জন্য দুটি আবেদনপত্র প্রস্তুুত করেন, কিন্তুু আত্মমর্যাদা বোধে তিনি সেই আবেদনগুলো পাঠাননি। পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, দলীয় দুই-চারজন নেতা কর্মী আগে আসলেও, এখন কেউ আর দেখতেও আসেন না। মাঝে মাঝে দু একজন মুক্তিযোদ্ধা আসলেও এখন আর তেমন কেউ খোঁজ-খবরও রাখেন না। বর্তমানে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্মক্ষ ও অসহায়। স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতর জীপন যাপন করছেন।
আতাউর রহমানের ছোটভাই প্রবাসী খলিলুর রহমান বলেন,আমার ভাই আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনি রাজনীতি করেছেন মানুষের জন্য। উনি সুস্থ থাকা অবস্থায়ও তাঁর দুই কন্যা সন্তানের যাবতীয় পড়ালেখার খরচ আমি চালিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তুু মেয়েদের তিনি চাকুরী করাতে পারেননি। এখন খুবই কষ্ট হয়,যাদের নিয়ে রাজনীতি করলেন তারা কেউ আমার শয্যাশায়ী ভাইয়ের পাশে নেই। আফসোস, হায়রে রাজনীতি।
অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান আতার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছি, কিন্তুু স্বাধীন দেশে আমি এখনো স্বাধীন হতে পারিনি। অসুস্থ হয়ে আমি বিছানার সাথে মৃত্যুর প্রহর গুনছি। আমার আফসোস যাদেরকে সাথে নিয়ে মানুষের জন্য রাজনীতি করলাম তারা কেউ আজ আর আমার পাশে নেই। মানুষ আমাকে সাহায্য করুক এটা আমি চাইনা। একজন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার কর্তৃক আমার যে সুযোগ-সুবিধা পাবার কথা সেটা আমার দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমি যেন আরো কিছুটা দিন এই পৃথিবীতে ভালোভাবে বাঁচতে পারি।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেণুর সাথে দুইদিন থেকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করাতে তাঁর বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন বুধবার সকালে বলেন,আসলে ব্যস্ততা থাকার কারণে আতা ভাইকে দেখা হয়নি। আমি উনাকে কয়েকদিনের মধ্যে দেখতে যাবো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজাদি সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবো। অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার উন্নত চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি প্রার্থনা করছি যেন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
Posted ৫:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯
সংবাদমেইল | Nazmul Islam
.
.